চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চকঝগড়ু উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে প্রায় ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে দুই চাকরি প্রার্থীকে নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলাটির বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলামের মাধ্যমে টাকা নিয়ে পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাইফুর রহমান বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা ।
জানা যায়, চলতি বছরের ২০ মে এই দু’পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। নিয়োগ পেতে দু’প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান তরিকুলকে প্রায় ৫ লাখ করে টাকা দেন। পরের ধাপগুলো নিয়মে হলেও ‘ঘুষ’ দেওয়া সাদিরুলকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে ও হাবিবুরকে নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এমন অভিযোগ পেয়ে ‘আলোকিত বাংলাদেশ’ অনুসন্ধানে নামে। কিছু কাগজপত্রসহ একটি কলরেকর্ড অনুসন্ধানের সহায়ক হয়।
বিদ্যালয়টিতে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ চকঝগড়ুর বাসিন্দাদের মুখে মুখে। তাদের দাবি- সাবেক চেয়ারম্যান তরিকুলের পচ্ছন্দের লোক সাদিরুল ও হাবিবুর। তাদের থেকে টাকা নিয়ে লোক দেখানো পরীক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করা হলেও তাদেরই নিয়োগ দেওয়া হয়। চেয়ারম্যানের মাধ্যমে টাকা নিয়ে একাজ করেন অধ্যক্ষ তাইফুর রহমান বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে নিয়োগ প্রার্থী পল্লব ঘোষ বলেন, লিখিত পরীক্ষার দিয়ে ভাইভাতে বসে ছিলাম। সবকিছু ঠিকঠাক উত্তর দিয়েছি। যারা ফাঁকা খাতা জমা দেওয়ার পর ভাইভাতে বসে কিছুই পারেননি তারাই চাকরি পেয়েছেন। টাকার বিনিময়ে তাদের চাকরি হয়েছে।
আরেক নিয়োগ প্রার্থীর বাবা কামিরুল ইসলাম বলেন, যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা মাদকাসক্ত। সাবেক চেয়ারম্যান তরিকুল ও প্রধান শিক্ষক তাইফুর টাকার বিনিময়ে তাদের চাকরি দিয়েছেন।
বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ টকি বলেন, নিয়োগকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম দু’জনের থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন। এই টাকার একটি অংশ শিক্ষক তাইফুরের পকেটে। নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি এলাকাতেও সবাই অবগত।
এদিকে, অনুসন্ধানের একপর্যায়ে নিয়োগ বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট একটি কলরেকর্ড হাতে পায় ‘আলোকিত বাংলাদেশ’। সেখানে অধ্যক্ষ তাইফুর রহমানকে নিয়োগ বাণিজ্যের প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা নেওয়ার কথা বলা হলে তিনি ‘ইজ্ঞিতে স্বীকার’ করেন। কলরেকর্ডটিতে তাকে বলতে শোনা যায়- ‘নিয়োগের সবকিছুই হয়েছে প্রশাসনের চাপে।’
শিক্ষক তাইফুর রহমান বলেন, নিয়োগকে কেন্দ্র করে কোন ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়নি। নিয়োগ পরীক্ষার সব কার্যক্রম ডিসি স্যারের প্রতিনিধি এবং ইউএনও মহোদয়ের নির্দেশনায় সম্পন্ন হয়েছে। অভিযুক্ত ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলামও একই বক্তব্য দিয়ে দাবি করেন, আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়টির সভাপতি মোছা. তাছমিনা খাতুন বলেন, আমার দপ্তরে পরীক্ষা নিয়ে যথাযথ নিয়ম মেনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখানে নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে কি-না আমার জানা নেই। কেউ লিখিত অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেব।
প্রশাসনের চাপে নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের কোন চাপ দেওয়ার সুযোগ নেই। এটা যদি তিনি (শিক্ষক তাইফুর) বলে থাকেন এটা সম্পন্ন ভিত্তিহীন। বর্তমান যে সময়, এখানে টাকাপয়সা লেনদেনের সুযোগ নেই।