পাবনার সুজানগর উপজেলায় গাজনার বিলের পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ১০ গ্রামের মানুষের চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। অসময়ের বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় চলতি মৌসুমে প্রায় দুই হাজার বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়নি। অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে শীতকালীন সবজি আবাদেও।
সরেজমিন দেখা যায়, পাবনার সুজানগর উপজেলার গাজনার বিলের ঘোড়ারভিটা, চরদুলাই, রাইশিমুল, চরগোবিন্দপুর, শারীরভিটা, বনকোলা, উলাট, আলাদী, দুর্গাপুরসহ ১০টি গ্রামের দুই হাজার বিঘা জমি এখনো অনাবাদি। অতচ গত বছর এই সময়ে এসব জমিতে ছিল পেঁয়াজের সবুজ পাতার সমাহার। কিন্তু এ বছর সেসব জমি পানিতে ডুবে আছে। কচুরিপানা আর আগাছায় ভরা, যা পরিষ্কার করে জমি প্রস্তুত করা ব্যয় ও সময় সাপেক্ষ। ফলে পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে অনাবাদি থাকা এসব জমিতে সবজি ও রবিশস্য আবাদ নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ও চাষিদের অভিযোগ, বিলের মধ্যে মাছ চাষে প্রভাবশালীদের অপরিকল্পিত পুকুর খনন, নিষ্কাশন চ্যানেলের পাড় কেটে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টিই এ জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ। ফলে জমিতে আটকে আছে কচুরিপানা ও আগাছা। শারীরভিটা গ্রামের কৃষক বোরহান আলী জানান, এখনো জমি থেকে পানি না নামায় এবং কচুরিপানা আটকে থাকায় এসব জমিতে আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। জমি প্রস্তুত করতে আরও সপ্তাহ তিনেকের বেশি সময় লেগে যাবে। আর দ্রুত পানি সরানো না গেলে চাষাবাদের এবার কী অবস্থা হবে তা একমাত্র আল্লাহপাকই জানেন।
আলাদীপুর গ্রামের কৃষক সাত্তার মালিথা বলেন, ‘এমনিতেই সার-কীটনাশকসহ আবাদের জন্য দরকারি সবকিছুর দাম বেশি। এর মধ্যে এই কচুরিপানা ও আগাছা পরিষ্কার করতে গিয়ে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ তো আবাদ করতেই পারিনি, হালি বা চারা পেঁয়াজ করতে পারব কি না এখন সেই চিন্তায় আছি।’
চরগোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক হেলাল মন্ডলের গাজনার বিলের এক অংশে ৭ বিঘা জমি রয়েছে। তিনি জানান, যে টাকায় পেঁয়াজ আবাদের বড় ব্যয় মেটার কথা, এবার সে টাকায় জমির আগছা পরিষ্কার করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, কচুরিপানা ও আগাছা পরিষ্কারে প্রতি বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। তবুও জমি আবাদের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। আরও দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লেগে যাবে। অথচ এসময় মাঠ পেঁয়াজে ভরে যাওয়ার কথা। তিনি আশঙ্কা করছেন দেরিতে আবাদ করায় পেঁয়াজের সঠিক দামও মিলবে না।
কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, জলাবদ্ধতায় অনাবাদি থাকায় পাবনায় চলতি মৌসুমে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ বছর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৫৮০ হেক্টর। এর বিপরীতে এ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে প্রায় সাত হাজার হেক্টর জমিতে।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. জামাল উদ্দীন বলেন, প্রতি বছরই এ জমিগুলো থেকে পানি দেরিতে নামে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। চলতি মাসের মধ্যেই পানি নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কচুরিপানা সরাতে কৃষকদের কিছুটা ব্যয় বাড়লেও এ থেকে জমিতে যে সার উৎপাদন হবে তাতে কৃষকদের ব্যয় মিটে যাবে এবং উৎপাদন ভালো হবে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতার জন্য দায়ীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।