চিরকুট লিখে মিফতাউল হাসান প্রতীক (১৮) নামের এক কলেজছাত্র হোস্টেলের ভিতরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সে আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। মমিফতাউল হাসান প্রতীক ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার মাহমুদুল হাসান সোগাহের ছেলে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নরসিংদী শহরের বাসাইল এলাকায় সিটি হাউজ নামে একটি ছাত্রবাসের কক্ষ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রতীক নরসিংদী শহরের বাসাইল এলাকায় সিটি হাউস নামে একটি প্রাইভেট ছাত্রাবাসে থেকে লেখাপড়া করতেন।
মিফতাউল হাসান প্রতীক মৃত্যুর আগে তার হাতের লেখা চিরকুটে লেখাছিল হুবাহু তুলে ধরলাম, সামিয়ার উদ্দেশ্যে: সামিয়া তোমার কথা আমি রাখতে পারলাম না। তুমি আমাকে যথেষ্ট প্রায়োরিটি দিছো । ভালোভাবেপড়াশোনা করো। ফ্যামিলি এর কথা মেনে চলো। লাইফে এ অনেক দূর এগিয়ে যাও।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত কারণে মানসিক চাপে ভূগছিলেন। তবে, তার পরিবারের সদস্য এবং সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে, এটি পরিকল্পিত হত্যা না কোনো দুর্ঘটনা ছিল কি না। কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ উভয়েই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।
পুলিশ প্রাথমিক ভাবে এটি আত্মহত্যা বলে সন্দেহ করছে, তবে ঘটনার পেছনে কোনো অন্যায় বা চাপে মৃত্যুর ঘটনা থাকতে পারে কি না, তা তদন্তের জন্য কাজ শুরু করেছে।
এদিকে সিটি হাউস ছাত্রবাসের সহকারী হোস্টেল সুপার নাদিমুল ইসলাম বলেন, কলেজ ছুটির পর প্রতীকের রুমমেটরা হোস্টেলে এসে রুম বন্ধ পেয়ে দরজা খোলার জন্য অনেক ডাকাডাকি করে। সে তাতে সাড়া না দেওয়ায় তারা দরজার ফাঁক দিয়ে ভেতরে কী হচ্ছে তা দেখার চেষ্টা করে। এ সময় তারা প্রতীককে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। পরে ছাত্ররা খবর দিলে আমরা কয়েকজন মিলে দরজা ভেঙে রুমে প্রবেশ করি। পরে ওর বন্ধুরাই তাকে উদ্ধার করে জেলা ১০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. হেরেম উল্যাহ আহছান জানান, কলেজের বাইরে আলাদা একটি প্রাইভেট হোস্টেলে বন্ধুদের সঙ্গে প্রতীক থাকত। ঘটনা শোনার পর ওই হোস্টেলে ছুটে যাই। সেখানে তার বন্ধুর কাছ থেকে একটি লিখিত কাগজ ও বেলুন পাই। বেলুনের মাঝে একটি মেয়ের নাম লেখা রয়েছে। এ ছাড়া মেয়েকে উদ্দেশ করে একটি চিঠি এবং বাবা-মাকে লেখা সান্তনাপত্র পাওয়া যায়।
নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ এন এম মিজানুর রহমান বলেন, মিফতাউল হাসান প্রতীক নামে এক শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তার গলায় কালো দাগ রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে গলায় ফাঁস লেগেছিল। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
এ ব্যাপারে নরসিংদী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো: কলিমুল্লাহ জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। ময়নাতন্তের জন্য লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা যেটুকু শুনেছি এটা আত্মহত্যা এর পরও আমরা তদন্ত করছি। আমাদের তদন্ত এবং ময়নাতন্তের পর বলা যাবে প্রকৃত ঘটনাটা কি? এটা আত্মহত্যা না হত্যা। এদিকে সদর মডেল থানার ওসি মো. এমদাদুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।