ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় উত্তরাঞ্চলজুড়ে তীব্র শীত ও কুয়াশা অব্যাহত
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:৩৩ | অনলাইন সংস্করণ
রংপুর ব্যুরো
ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় উত্তরাঞ্চলজুড়ে তীব্র শীত ও কুয়াশা অব্যাহত রয়েছে। এঅঞ্চলে প্রতিদিনই বাড়ছে শীতের তীব্রতা । নগরীর স্টেশন এলাকায় কেজি মার্কেটে শীতের কাপড় কিনতে ক্রেতাদের ভিড় । ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় রংপুর অঞ্চলে শীতের তীব্রতা প্রতিদিন বেড়েই চলছে। সন্ধ্যা থেকে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে নগরীর প্রতিটি এলাকা।
শীত নিবারণের জন্য ছিন্নমূল অসহায় মানুষদের অন্তহীন কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। অনেকে খড় জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ ৬ নারী হয়েছে। সেই সঙ্গে পুরাতন কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় বেড়েছে।
রংপুরে ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন। দিনভর সূর্যের দেখা মিলছে না। পৌষের আগেই তীব্র শীত অনুভূত হওয়ায় বিপাকে সাধারণ মানুষ। নিম্নআয়ের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত বিপনী বিতান থেকে গরম কাপড় কিনে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরে শীতের প্রকোপ কম থাকায় বেচা-কেনা ভালো ছিলো না। এবার নভেম্বর মাস থেকে বেচাকেনা বেশ ভালো।
কেজি মার্কেট হিসেবে পরিচিত রংপুর নগরীর স্টেশন এলাকার এই পুরোনো কাপড়ের বাজারে মেলে পুরোনো ব্লেজার, জ্যাকেট, সোয়েটার, ট্রাউজার, ওভারকোট ও কম্বলসহ সব শ্রেণির মানুষের শীতের পোশাক। প্রতিদিনই বিক্রি হচ্ছে লাখ টাকার শীতের কাপড়। দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি পুরোনো শীতবস্ত্রে। স্টেশন বাজার ছাড়াও সুরভী উদ্যানের সামনে ফুটপাতসহ বিভিন্ন মার্কেটে পুরোদমে জমে উঠেছে শীতের কাপ কেনা-বেচা। তবে এবারে দাম বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
শীত বস্ত্র কিনতে আসা রহিমা নামে এক নিম্নআয়ের নারী জানান, এবার নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শীত পড়তে শুরু করেছে। ডিসেম্বর থেকে শীত বাড়তে শুরু করেছে। এখানকার শীতের কাপড়গুলোর মান ভালো কিন্তু দাম তুলনামূলক কম। পরিবারের জন্য শীতের পোশাক কিনলাম এখান থেকে।
রমেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক ডা. শরিফুল ইসলাম বলেন, “সর্বাধিক শীতপ্রবণ এলাকাগুলোর শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তবে এবার শীত বাড়ার সাথে সাথে নতুন রোগী ভর্তির সংখ্যা একটু বেশি।” শীতে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি বিপাকে পড়েছেন। সকালে ও রাতে শীতের তীব্রতা আরো বেড়ে যাচ্ছে। ফলে হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর ভিড় বাড়ছে। শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি এবং নিউমোনিয়ার মতো রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে শীতজনিত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। এছাড়াও চিকিৎসার পাশাপাশি শীত নিবারণে পরিবার থেকে যথাযথ পদক্ষেপ বা সচেতনতার তাগিদ দেন তিনি।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে রংপুর আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গতকালের চেয়ে শূন্য দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আরো জানা যায়, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৯ ডিগ্রি, দিনাজপুরে ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি, সৈয়দপুর ১৪ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি, নীলফামারীর ডিমলায় ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি, ঠাকুরগাঁওয়ে ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি, লালমনিরহাটে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি ও গাইবান্ধায় ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।রংপুরের তাপমাত্র ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছে বলে রংপুরের আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন।
এই শীত থেকে রক্ষা পেতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে। গত এক সপ্তাহে আগুন পোহাতে গিয়ে ৬ জন নারী দগ্ধ হয়ে রমেক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। রমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ১৪টি শয্যা রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ভাবে আগুনে পোড়া রোগী রয়েছেন ৪৬ জন। তাদের অন্যান্য ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহে শীতের হাত থেকে বাঁচতে আগুনের উত্তাপ নিয়ে গিয়ে দগ্ধ হয়ে ৬ নারী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার সকালে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার জফুলা বেগম নামে ৯০ বছরের এক বৃদ্ধা নারী ভর্তি হয়েছেন। খড়কুটা দিয়ে আগুনের উত্তাপ নিতে গিয়ে তিনি দগ্ধ হন। তার শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তিনদিন আগে নীলফামারীর পলাশী এলাকা থেকে সালমা বেগম নামে এক নারী ভর্তি হয়েছেন। প্রতিদিনই এ ধরনের দগ্ধ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এবিষয়ে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক শাহিন শাহ জানিয়েছেন, 'প্রতিবছরই আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ এবং নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। এজন্য জনগণের সচেতনতা প্রয়োজন। আমরা সব সময়ই পরামর্শ দিচ্ছি।
জেলা প্রশাসক মো. রবিউল ফয়সাল জানান, শীত নিবারণে হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ চলমান আছে। এবার শীতে নিম্নআয়ের মানুষের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রংপুর জেলা প্রশাসন। জেলার প্রতিটি উপজেলায় কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।