ঢাকা ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রামে-কক্সবাজার রুটে ট্রেনে ট্রিপ বাড়ানোর প্রস্তাব 

চট্টগ্রামে-কক্সবাজার রুটে ট্রেনে ট্রিপ বাড়ানোর প্রস্তাব 

কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনের ট্রিপ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। স্পেশাল ট্রেনটি দিনে দুইবারের পরিবর্তে চারবার যাতায়াতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এ প্রস্তাবনা গৃহীত হলে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়ার পাশাপাশি পর্যটন খাত আরও সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, বিদ্যমান জনবল এবং লজিস্টিকস ব্যবহার করেই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের কক্সবাজার স্পেশালকে নিয়মিত করা ও ট্রিপ সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব। তাই রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেন্ডেন্টের প্রস্তাবটি রেলভবন গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে বিপুল যাত্রীচাহিদা পূরণ হবে। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়বে। জানা যায়, এই প্রস্তাবে দুই জোড়া ট্রেনের নতুন নামও রাখা হয়েছে ‘সৈকত এক্সপ্রেস’ ও ‘প্রবাল এক্সপ্রেস’।

বর্তমানে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ও ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’ নামে দুটি ট্রেন চলাচল করছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচলরত বর্তমান বিশেষ ট্রেনের নাম ‘সৈকত এক্সপ্রেস’ এবং নতুন ট্রেনের নাম ‘প্রবাল এক্সপ্রেস’ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি ট্রেনে ৭৪৩টি আসন থাকবে। ১৬টি কোচ নিয়ে ট্রেনগুলো চলাচল করবে।প্রস্তাবিত দুই জোড়া ট্রেনের সময়সূচি অনুযায়ী, প্রথম ট্রেন চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ছাড়বে সকাল সাড়ে ৬টায়। কক্সবাজারে পৌঁছাবে সকাল ১০টায়। ওই ট্রেন সকাল ১০টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশে কক্সবাজার স্টেশন ছেড়ে যাবে। এটি চট্টগ্রামে পৌঁছাবে বেলা সোয়া ২টায়।

চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে বিকাল পৌনে ৩টায় আরেকটি ট্রেন কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। ওই ট্রেন কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে। কক্সবাজার থেকে সেটি আবার সন্ধ্যা ৭টায় ছাড়বে। সেটি চট্টগ্রাম স্টেশনে এসে পৌঁছাবে রাত সাড়ে ১০টায়। এসব ট্রেন যাত্রাপথে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য ষোলশহর, জানালীহাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা ও রামু স্টেশনে থামবে। গত ১১ ডিসেম্বর রেলওয়ে মহাপরিচালককে চিঠি দেন পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম। ওই চিঠিতে বলা হয়, যাত্রী চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে এক জোড়া স্পেশাল ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। এই ট্রেন স্থায়ীভাবে পরিচালনার জন্য কক্সবাজার ও আশপাশের এলাকার সামাজিক, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা অনুরোধ জানিয়েছেন।

এর পাশাপাশি আরও এক জোড়া ট্রেন যোগ করে এখন দুই জোড়া ট্রেন পরিচালনার প্রস্তাব করা হলো। নতুন প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, প্রথম ট্রেন চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ছাড়বে সকাল সাড়ে ৬টায়। কক্সবাজারে পৌঁছাবে সকাল ১০টায়। ওই ট্রেন সকাল ১০টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার রেলস্টেশন ছেড়ে যাবে। চট্টগ্রাম পৌঁছাবে দুপুর সোয়া ২টায়। চট্টগ্রাম থেকে দুপুর পৌনে তিনটায় ট্রেনটি কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ফের ছেড়ে যাবে। ওই ট্রেন কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে। কক্সবাজার থেকে সন্ধ্যা ৭টায় আবার ছাড়বে। সেটি চট্টগ্রাম স্টেশনে এসে পৌঁছাবে রাত সাড়ে ১০টায়।

জানা গেছে, ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন ২০২৩ সালের নভেম্বরে উদ্বোধনের পর প্রথম এই রুটে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হয় ২০২৩ এর ১ ডিসেম্বর। বিপুল যাত্রীচাহিদা থাকলেও এই রুটে চলাচল করছে মাত্র দুটি নিয়মিত ট্রেন। তাও চলছে কেবল ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচল করা কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেস বিরতিহীন হওয়ায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোকজন দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের সুফল পাচ্ছেন না। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয়দের। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেন চালুর বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। এর বড় কারণ হচ্ছে, বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যমান ব্যবস্থায় কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেসে চড়ে প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়ার সুযোগ পান মাত্র ১১৫ জন করে যাত্রী। ফলে এই রুটে স্বাভাবিক সময়েই ট্রেনের টিকিট পাওয়া যেন অনেকটা ‘সোনার হরিণ’ পাওয়ার সমান।

এমন বাস্তবতায় ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে গত ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে একটি ঈদ স্পেশাল ট্রেন চালু করা হয়। ঈদের দিন বাদ দিয়ে সেটি চলে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর ১৭ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই ট্রেন ফের চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ট্রেনটি এখনও চলছে। রেলওয়ের বিভাগীয় রেল ব্যবস্থাপক (চট্টগ্রাম) এ বি এম কামরুজ্জামান বলেন, কক্সবাজার রুটে ট্রেনের টিকিটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ইঞ্জিন ও কোচসংকটের কারণে নতুন ট্রেন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এখন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত যে বিশেষ ট্রেন চলছে, তা দিয়ে দুই জোড়া ট্রেন পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ট্রেন বাড়লে স্থানীয় বাসিন্দারা কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন। প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলপথ উদ্বোধন করেন। এরপর ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ উদ্বোধন করা হয়।

১০ জানুয়ারি থেকে যুক্ত হয় ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’ নামের আরও একটি ট্রেন। দুটি ট্রেনেই ঢাকা হয়ে কক্সবাজার চলাচল করায় দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম থেকেই নতুন ট্রেন চালুর দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয় যাত্রীরা। এর মধ্যে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ও ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’-এ চড়ে প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়ার সুযোগ পান মাত্র ১১৫ জন করে যাত্রী। ফলে এই রুটে স্বাভাবিক সময়েই ট্রেনের টিকিট পাওয়া যেন অনেকটা ‘সোনার হরিণ’ পাওয়ার সমান।

অপরদিকে গেলো ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ঈদ স্পেশাল ট্রেনটি চালু করা হয়। ঈদের দিন বাদ দিয়ে সেটি চলে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর ১৭ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই ট্রেন ফের চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে স্পেশাল ট্রেনটি এখনও চলছে।

চট্টগ্রামে-কক্সবাজার রুটে ট্রেনে ট্রিপ বাড়ানোর প্রস্তাব
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত