প্রকৃতিতে সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে যে কয়েকটি লতা, তাদের অন্যতম হচ্ছে আলোকলতা বা স্বর্ণলতা। পথে-প্রান্তরে এই উদ্ভিদ তার নিজের মত করে সৌন্দর্য ছড়ায়, শুধু সৌন্দর্য নয় এটির রয়েছে অনেক ঔষধি গুণও।
উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে সব জায়গায় দেখা যেতো আলোকলতা বা স্বর্ণলতিকা নামের উপকারী গাছটি। গ্রাম শহরের বসবাসকারী সব বয়সী মানুষ এই উদ্ভিদকে চেনেন। পরজীবী এই উদ্ভিদ বেশিরভাগ দেখা যেতো বড়ই গাছের কান্ডে। এর সবুজাভ উজ্জ্বল রঙ বহুদূর থেকে সকলের নজর কেড়ে নেয়। এই লতিকার বেড়ে ওঠা ও ফুল ফোটার ভরা মৌসুম হচ্ছে পৌষ থেকে চৈত্র মাস বলা চলে এ সময়টি তাদের ভরা যৌবন কাল।
কিন্তু বর্তমানে গ্রামগুলোতে খুব কম দেখা যাচ্ছে স্বর্ণলতিকা গাছকে। মাঝেমধ্যে বড়ই গাছে হঠাৎ চোখে পড়ে এ গাছ । তবে সে সংখ্যাও খুব বেশি নয়।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার বাসিন্দা ইসলাম মিয়া বলেন, ‘এই উদ্ভিদ নিজেই যেন ফুল! আমার বাসার কাছেই রেল লাইনের ধারে কূল গাছে এই লতা দেখতে পাওয়া যেতো কিন্তু এখন আর দেখা যায় না, বড়ই গাছগুলো এখন আর তেমন নেই অকারণে এগুলোকে কেটে ফেলা হয়েছে। আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা অনিল মাষ্টার বলেন, আগে আলোক লতিকা গাছটি বড়ই গাছে খুব দেখা যেতো এ গাছটির ওষুধী গুণ রয়েছে তবে সময়ের সাথে সাথে গাছ পালা উজাড় হচ্ছে, এই গাছ অন্য গাছ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে তাই আক্রান্ত গাছটির ফুল ও ফল হয় না অনেক সময় মরেও যায় তাই আলোক লতিকা গাছটিকে মানুষ বাড়তে দেয় না। তাই এটি এখন আর চেখে তেমন একটা পড়ে না।
ভেলা বাড়ি এলাকার মমিনুল হক বলেন আমাদের জেলায় একে ওষধি লতা হিসেবেও গণ্য করা হয়। দুই-তিন যুগ আগেও এ জেলার যে কোন স্থানে পথে প্রান্তরে ব্যাপকভাবে চোখে পড়তো স্বর্ণলতা। বড়ই গাছই মূলত এর প্রধান ধারক গাছ। কিন্তু বর্তমানে পাড়াগাঁয়ে পথের পাশে বড়ই গাছ আর অবহেলা অনাদরে সহজে বেড়ে ওঠে না। যদিও বা কোথাও বেড়ে ওঠে এর মালিক দাঁড়িয়ে যায় এবং পরিকল্পিত ও বেশি ফলনের প্রয়োজনে প্রতি বছরই একটা সময়ে এর ডালপালা ছেঁটে ফেলা হয়। ফলে অবলম্বন হারায় স্বর্ণলতা। সেই গাছে নতুন ডালপালা গজায় কিন্তু স্বর্ণলতা আসে না। যদিও বা আসে তাকে আগাছা হিসেবে উপড়ে ফলা হয়। আর এভাবেই কমে যাচ্ছে স্বর্ণলতা।