তাড়াইলে শীত ও কুয়াশায় বোরোর বীজতলা ক্ষতিগ্রস্তের শঙ্কা 

প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:১৩ | অনলাইন সংস্করণ

  রুহুল আমিন, তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীত জেঁকে বসেছে হাওরাঞ্চলে। এতে বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাওরাঞ্চলের শুরু কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার কৃষকরা।

সূর্যের আলো ঠিকমতো না পাওয়ায় বোরোর বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এরই মধ্যে কিছু জায়গায় হলুদ ও ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করেছে চারা। তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এখনও বীজতলার ক্ষতি হওয়ার মতো পরিবেশ হয়নি। প্রতিদিনই তাঁরা মাঠ পর্যায়ে খোঁজখবর রাখছেন, কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১০ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪৯৯ হেক্টর জমিতে কিন্তু আবাদ হয়েছে ৫০৫ হেক্টর জমিতে।

সরজমিন উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, চাষিরা বীজতলার পরিচর্যায় ব্যস্ত। কেউ আগাছা পরিস্কার করছেন, আবার কেউ পানি ও বালাইনাশক দিচ্ছেন। অনেক কৃষককে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে দেখা গেছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে তাঁরা বীজতলার বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে পাশের উপজেলায়ও এ চারা বিক্রি করবেন চাষিরা। কিছুদিনের মধ্যে জমিতে এ চারা রোপণ শুরু করবেন চাষিরা। এ মৌসুমে প্রতি হেক্টরে পাঁচ থেকে ছয় টন ফলন পাওয়ার আশা করছেন সংশ্নিষ্টরা। কৃষকরা বলছেন, শুরুতে শীত ও কুয়াশা কম থাকায় বীজতলায় চারা ভালোভাবে বাড়তে শুরু করে। তবে হঠাৎ করে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে তাতে ছন্দপতন হয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এমন আবহাওয়া রয়েছে। দেরিতে সূর্যের দেখা পাওয়া গেলেও স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকছে না।

উপজেলার দামিহা ইউনিয়নের কাজলা মুন্সি বাড়ি গ্রামের কৃষক অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক নাজমুল হক বলেন, বোরো ধান আবাদের জন্য তিনি উন্নত জাতের ৩২ কাটা জমিতে বীজতলা তৈরি করেছেন। চারাগুলো বেশ পুষ্ট হলেও ঘন কুয়াশা আর শীতে হলুদ ও ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। অনেক বীজতলা মৃতপ্রায় অবস্থায় আছে। বীজতলা নষ্ট হলে চারা কিনে ধান চাষ করা সম্ভব হবে না। যদি বৈরী আবহাওয়া ও কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে বীজতলার ক্ষতি হবে। বর্তমানে আবহাওয়া যে অবস্থায় আছে, রোদ পেলে বীজতলা ঠিক হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, নিজের ৫০০ কাটা জমিতে ধানের চারা রোপণ করা শুরু করেছেন। কিন্তু কুয়াশায় বীজতলার চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক কৃষকই জমি প্রস্তুত শুরু করেছেন। বালাইনাশক ও সার দিয়েও চারা স্বাভাবিক করতে পারছেন না। ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা বিপাকে আছি। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে এ বছর।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বিকাশ রায়  বলেন, শীত ও কুয়াশার কারণে কিছু বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ আবহাওয়ায় করণীয় বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পানি রাখা ও কুয়াশা বেশি হলে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে। সঠিক পরিচর্যা করলে শঙ্কার কোনো কারণ নেই। তিনি আরও বলেন, ধানের দাম ভালো, তাই এ মৌসুমে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।