বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, অর্থ পাচার এবং দুর্নীতির ফাইল নষ্ট করতেই সচিবালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে । সচিবালয়ের আগুন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এ আগুন গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রংপুরের মিঠাপুকুরের আটপুনিয়া গ্রামে সচিবালয়ে আগুন নিভাতে গিয়ে নিহত ফায়ার ফাইটার সোহানুর জামান নয়নের বাড়িতে স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি একথা বলেন।
রেজভীর বলেন, ‘সচিবালয়ে আগুন গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ, নিঃসন্দেহে এটা চক্রান্তের অংশ। পতিত শেখ হাসিনার একজন প্রধান আমলা, মুখ্য সচিব প্রচুর টাকা পাচার করেছেন। তার সেই অর্থপাচারের ফাইলগুলো ছিল পুড়ে যাওয়া ফাইলগুলোর মধ্যে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে গেছে। অর্থপাচারের শুধুমাত্র একটা ঘটনা উঠে এসেছে। আরো কত ঘটনা আছে! এসব ঘটনাকে ধামাচাপা দিতেই সচিবালয়ের নয় তলায় আগুন দেয়া হয়েছে। যেখানে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ছিল।’
তিনি বলেন, দেশে পরাজিত স্বৈরাচারের অনেক দোসররা রয়েছেন। তারা কিন্তু আমলাতন্ত্র, পুলিশসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন জায়গায় এখনো রয়েছেন। সর্বক্ষেত্রে তো পরিবর্তন হয়নি এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তারা ঘাপটি মেরে আছেন। তারা কোথায় কি নাশকতা, কোথায় কি চক্রান্ত করছেন, তার কোনো ঠিক নেই। এসব ষড়যন্ত্র ঠেকাতে ও দেশকে স্থিতিশীল রাখতে গিয়ে জীবন দিতে হচ্ছে নয়নের মতো ছেলেদের। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে আবু সাঈদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। পরে জীবন দিয়েছে নয়ন। সেও রংপুরের ছেলে। শুধু একটি শোক জানিয়ে দায়িত্ব শেষ করা যাবে না।
বিএনপির শীর্ষ এ নেতা বলেন, স্বৈরাচার সরকার মানুষের টাকা যেভাবে আত্মসাৎ করেছে তা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও তাদের নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫০ মিলিয়ন ডলার পাচারের ঘটনা সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে। এটা তো একটিমাত্র ঘটনা। আরও এমন অনেক ঘটনা আছে সেগুলো চাপা দেওয়ার জন্য নয়তলা ভবনে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিগত সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার ও দুর্নীতির অনেক অজানা তথ্য পুড়ে গেছে। শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থপাচারের ঘটনা যাতে আলোর মুখ দেখতে না পারে সেই কারণে এই চক্রান্ত।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের গণতন্ত্রকে স্থায়ী রুপ দিতে এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৗমত্ব রক্ষায় সামনে অনেক কাজ করতে হবে। তা না হলে দেশ টিকবে না। দেশের মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষা পাবে না। গোটা পৃথিবীর সমস্ত দেশ ও রাষ্ট্রনায়করা স্বৈরাচারের পতন ও নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন প্রত্যেকের প্রতি তারা সংহতি জানিয়েছেন। কিন্তু একটি দেশ সংহতি জানাতে দ্বিধা করছে সে দেশটি হলো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। তারা শেখ হাসিনাকে আবার ফিরিয়ে আনার জন্য, টিকিয়ে রাখার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। তারা সংখ্যালঘু নির্যাতনের নতুন বয়ান তৈরি করছে যাতে শেখ হাসিনার অপকর্মগুলোকে ঢাকতে চায়।
পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে নিহত ফায়ার ফাইটার নয়নের রুহের মাগফেরাত কামনা করে কবর জিয়ারত করেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ। তিনি নিহত নয়নের পরিবারের হাতে দুই লাখ টাকা অর্থ সহায়তা দেন। এছাড়াও মিঠাপুকুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোতাহারুল ইসলাম নিক্সন পাইকার বিএনপির পক্ষ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন। এসময় নিহত নয়নের বাবা আক্তারুজ্জামান ও মা নারগিস বেগম সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহবায়ক ও বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন, জেলা বিএনপির আহবায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু, মিঠাপুকুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোতাহারুল ইসলাম নিক্সন পাইকার প্রমুখ ।
২৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের ঘটনায় জরুরি প্রয়োজনে আগুন নেভাতে যান নয়ন। সেখানে রাস্তা পারাপারের সময় বেপরোয়া গতির একটি ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ প্রদীপ নিভে যায় তার।