দিনাজপুরে আমনের ভরা মৌসুমে আবারও চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। এতে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। এমনকি কিছু চালে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বস্তাভিত্তিক বিক্রিতেও দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। ২৫ কেজির বস্তায় ১০০ টাকা ও ৫০ কেজির বস্তায় ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে নিম্নআয়ের মানুষ যারা কঠোর পরিশ্রম করে জীবনধারণ করেন, তাদের জন্য চাল কেনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।চালের দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবনযাত্রায় চাপ বাড়ছে। গত সপ্তাহে জিরাশাইল চালের দাম ছিল ৭৫ টাকা কেজি। এখন বেড়ে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল চালের দাম এক সপ্তাহ আগে ছিল ৮০ টাকা, বর্তমানে তা ৮৪ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে বিআর ২৮ চাল এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬২ টাকা, এখন তা বেড়ে ৬৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বিআর ২৯ চালের দামও বেড়েছে। গত সপ্তাহে যা ছিল ৫৮ থেকে ৬২ টাকা, বর্তমানে তা ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, গুটি স্বর্ণা চালের দাম এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০ টাকা, বর্তমানে তা ৫৪ টাকা কেজি হয়ে গেছে। এই দাম বৃদ্ধির ফলে খেটে খাওয়া মানুষের জন্য চাল কেনা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।
দিনাজপুরের বাহাদুর বাজারের এনএ মার্কেটে চাল কিনতে আসা মিজানুর রহমান জানান, ‘চালের দাম গত এক সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। ভরা মৌসুমেও যদি এভাবে চালের দাম বাড়ে, তবে আমাদের সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়বে। কারণ ছোট চাকরি করি, আমার বেতন বাড়েনি। কিন্তু চালসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। এভাবে আমরা কীভাবে চলব?’
বাহাদুর বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা মো. নবাব আলী বলেন, ‘মিল থেকে বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে ওই চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্রেতারা আগে ২৫ কেজি বা ৫০ কেজির বস্তার চাল কিনতেন। এখন তারা ৫ কেজি করে চাল কিনছেন।পাইকারি চাল ব্যবসায়ী মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ‘আকস্মিক চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি অনেক কমে গেছে। ক্রেতারা দাম বেশি হওয়ায় কম পরিমাণ চাল কিনছেন।’
দরদি অটোরাইস মিলের মালিক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘চালের বাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই। আমাদের বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে, তাই চালের দাম বেড়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক দফা বন্যার কারণে ধানের আবাদ কমে গেছে। তাই ধানের দাম বেড়েছে।’
বাংলাদেশ চাল মিল মালিক সমিতির সহসভাপতি শহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বলেন, ‘আমন মৌসুমে ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। তবে বাজারে এখনো পর্যাপ্ত ধান উঠছে না। কৃষকরা প্রয়োজনমতো ধান বিক্রি করছেন, তবে মিলারদের চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম। বেশি দামে ধান ক্রয় করতে হচ্ছে। ফলে চালের দাম বেড়ে গেছে। ধানের সরবরাহ বাড়লেই চালের দাম কমে আসবে।’