হিমেল বাতাস, তার সঙ্গে সমুদ্রের গর্জন এরই মধ্যে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল ২০২৪ সালের সূর্য। আর কয়েক ঘণ্টা পর শুরু হবে নতুন বছর ২০২৫। বিদায়ী বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে পৃথিবীর দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে জড়ো হয়েছিলেন হাজারো পর্যটক। নতুন বছর যেন সবাই সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে কাটাতে পারেন সেই প্রত্যাশাই করছেন তারা।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরের পর থেকেই পর্যটকদের ভিড় শুরু হয় কক্সবাজারের লাবণী, কলাতলী, ইনানী এবং হিমছড়ি পয়েন্টে। শেষ বিকেলে ভিড় চরমে পৌঁছায়। সৈকতের প্রতিটি প্রান্তে নানা বয়সী মানুষ ব্যস্ত ছিলেন প্রতিটি মুহূর্ত ক্যামেরা বন্দি করতে। কেউ কেউ বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে দলবদ্ধভাবে উপভোগ করছিলেন সময়। অনেকে একান্তে নিজের মতো করে মিলিয়ে নিচ্ছিলেন প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মেহেদী হাসান বলেন, “পুরো বছর কাজের চাপ আর ব্যস্ততার মধ্যে কাটিয়েছি। বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখে নতুন বছরে নতুন স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পেতে এসেছি কক্সবাজারে। এটা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
একই রকম অনুভূতি প্রকাশ করেন চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমি আক্তার ত্বন্নি। তিনি বলেন, “প্রকৃতির এমন মোহনীয় দৃশ্য কাছ থেকে উপভোগ করার সুযোগ পেয়ে সত্যিই আমি মুগ্ধ। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত বছরের শেষ দিনটিকে আরো বেশি স্মরণীয় করে তুলেছে।
কলেজ শিক্ষক নজির আহমদ বলেন, “প্রতি বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখার জন্য আমরা কক্সবাজার আসি। সূর্যাস্ত উপভোগের জন্য কক্সবাজার অসাধারণ একটি জায়গা।”
স্থানীয় দর্শণার্থী আব্দুল বাসেদ বলেন, “কক্সবাজারের সন্তান হলেও সমুদ্রসৈকতের সুন্দর মুহূর্ত দেখার জন্য ছুটে আসি। ২০২৪ সালের শেষ দিনটি উপভোগ করার জন্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সুগন্ধা পয়েন্টে এসেছি।”
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পর্যটকদের সুবিধার্থে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ, র্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ, বিচকর্মি ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
সুগন্ধা পয়েন্টে দায়িত্বরত বিচকর্মিদের সহকারী সুপারভাইজার বেলাল হোসেন বলেন, “দুপুরের পর থেকে পর্যটক আসা শুরু করে। শেষ বিকেলে ভিড় জমে। আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তার কাজে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছি।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, “বছরের শেষ দিনে পর্যটকদের এমন ভিড় কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের জন্য আশার আলো। আমরা আশা করছি, আগামী দিনগুলোতেও পর্যটকরা এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসবেন।”
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম বলেন, “থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে উন্মুক্ত কোনো আয়োজন না থাকলেও পর্যটকদের নিরাপত্তায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (পর্যটন সেল) মো. তানভীর হোসেন বলেন, “সমুদ্রসৈকত ও অন্যান্য এলাকায় ফানুস উড্ডয়ন নিষেধ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে আমাদের বিচকর্মিরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবসময় সক্রিয় রয়েছে।