ঢাকা ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিনা টিকিটে রেল ভাড়া আত্মসাৎ, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

বিনা টিকিটে রেল ভাড়া আত্মসাৎ, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

রেলওয়ে ভ্রমণে বিনা টিকিটে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া ও জরিমানা আদায় করলেও সেই অর্থ রেলওয়ের কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করছেন কিছু অসাধু রেল কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এতে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে এবং লোকসানে থাকা সরকারি এই সেবাখাত ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।

সূত্র জানায়, বিনা টিকিটে ভ্রমণ করলে জরিমানাসহ ভাড়া আদায়ের বিধান থাকলেও যাত্রীরা প্রকৃত ভাড়ার চেয়ে কম অর্থ দিয়েই ভ্রমণ করছেন। অনেকে রশিদ বা টিকিট না পেয়েও ট্রেনে ভ্রমণ করেন।

লালমনিরহাটের মুদি দোকানদার শাহীন মিয়া জানান, প্রায় সময়ে লালমনিরহাট এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা, বগুড়া যাই। টিকেট না কাটলে এ্যাটেনডেন্ট কিংবা টিটিই টাকা নেন, কিন্তু কোনো রশিদ দেন না। সে টাকা সরকারের কাছে জমা হয় কি না তা বলতে পারি না।

একই অভিজ্ঞতা শেয়ার করে চাকুরিজীবী রফিকুল ইসলাম জানান, অনেক সময় টিকেট পাওয়া না গেলেও যাতায়াতের জন্য ট্রেনে উঠে পড়ি। টিটই এসে টিকেট চাইলে বলি টিকেট নেই। তখন আমার মত অনেক যাত্রী তাদের হাতে টাকা দেয়, মাঝে মাঝে রশিদ দিলেও অধিকাংশ সময় তারা কোনো প্রকার রশিদ বা টিকেট দেন না।

ট্রেনে নিয়মিত ভ্রমণ করা আরও অনেক যাত্রী জানান, বিনা টিকিটে ভ্রমণ করলে টিকিটের নির্ধারিত মূল্য থেকে কম টাকা দিলেই যাতায়াত করা সম্ভব। ফলে অনেক যাত্রীই টিকিট কাটার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না।

সম্প্রতি টিকিটবিহীন যাত্রীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার একটি ভিডিও ফুটেজ ফাঁস হয়েছে। এতে দেখা যায়, রেলওয়ের দুই এটেনডেন্ট রশিদ ছাড়াই টাকা নিচ্ছেন।

একাধিক এ্যাটেনডেন্টের কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, লালমনিরহাট রেল বিভাগের অধীনে লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনের জন্য এ্যাটেনডেন্ট রয়েছেন ১৪ জন পার্বতীপুরে ১৪ থেকে ১৫ জন এবং সান্তাহারে রয়েছেন ৬ জন। প্রতিটি ট্রেন থেকে অনিয়মের মাধ্যমে (রশিদ না দিয়ে টাকা গ্রহণ) যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকার একটি অংশ দিতে হয় ডিএমই অফিস, হেড টিএক্সআর অফিস ও এ্যাকাউন্টস অফিসকে। জনপ্রতি এ্যাটেনডেন্টকে ১৩ শত থেকে ১৫ শত টাকা দিতে হয়। তারা আরও জানান, ডিএমই- এর পক্ষে ওই অফিসের টিএক্সআর উজ্জল মাহমুদ এই টাকার ভাগ নেন।

লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের যান্ত্রিক প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) তাসরুজ্জামান বাবু সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।

বিভাগীয় ব্যবস্থাপক লিয়াকত শরীফ খান উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, "রশিদ ছাড়া যাত্রীরা কেনো টাকা দিবে?"—এ কথা বলেই তিনি কল কেটে দেন। পরে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাঁকে আর পাওয়া যায়নি।

সচেতন নাগরিক সমাজ বলছে, রেলের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে প্রতি বছর সরকার প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

সিনিয়র সাংবাদিক আবু হাসনাত রানা বলেন, রেলওয়ের আয় বাড়াতে এবং অর্থের অপচয় রোধে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সরকারি এই সেবাখাতকে সুশৃঙ্খল করতে দুর্নীতি বন্ধের পাশাপাশি কঠোর নজরদারি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

এসএস/

বিনা টিকিট,রেল ভাড়া,রাজস্ব,সরকার
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত