ঢাকা ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফেলানী হত্যার ১৪ বছর, বিচার পায়নি পরিবার

ফেলানী হত্যার ১৪ বছর, বিচার পায়নি পরিবার

আগামীকাল ৭ জানুয়ারি, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক কিশোরী ফেলানী হত্যার ১৪ বছর পূর্ণ হবে। ২০১১ সালের এই দিনে বিএসএফ-র গুলিতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ফেলানী। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে ফেলানীর মৃতদেহ।

গণমাধ্যমসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত। পরে বিএসএফ এর বিশেষ কোর্টে দুই দফায় বিচারিক রায়ে খালাস দেয়া হয় অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে। এ রায় প্রত্যাখ্যান করে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন মাসুম এর সহযোগিতায় ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টে রিট আবেদন করে ফেলানীর পরিবার। এই হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছরেও সুষ্ঠু বিচার পায়নি ফেলানীর পরিবার।

ফেলানীর বাবা-মায়ের অভিযোগ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের কারণেই ফেলানির বিচার পাননি তারা। তবে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সঠিক বিচার পাবে বলেও প্রত্যাশা করেন তারা।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের দরিদ্র নূরুল ইসলাম পেটের তাগিদে আর দশজনের মতো পারি জমায় ভারতে। পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতের বঙ্গাইগাঁও এলাকায়। নূরুল ইসলামের বড় মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয় বাংলাদেশে। বিয়ের উদ্দেশে নিজ দেশে ভারতের কাঁটাতার টপকে আসতে হবে তাদের। ৭ জানুয়ারি শুক্রবার ভোর ৬টা ফুলবাড়ির অনন্তপুর সীমান্তে মই বেয়ে কাঁটাতার টপকায় ফেলানীর বাবা। পরে কাঁটাতার টপকানোর চেষ্টা করে ফেলানী। এসময় ভারতীয় বিএসএফ’র গুলিতে বিদ্ধ হন সে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আধাঘণ্টা ধারে ছটফট করে কাটাতারেই ঝুলন্ত অবস্থায় নির্মমভাবে মৃত্যু হয় কিশোরী ফেলানীর। এরপর সকাল পৌনে ৭টার থেকে নিথর দেহ কাঁটাতাঁরে ঝুলে থাকে দীর্ঘ সাড়ে ৪ঘণ্টা।

এঘটনায় বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হলে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। বিএসএফ এর এ কোর্টে সাক্ষী দেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামী অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফ এর বিশেষ কোর্ট। পরে রায় প্রত্যাখ্যান করে পুনঃবিচারের দাবি জানায় ফেলানীর বাবা।

২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পূনঃবিচার শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও আদালতে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। ২০১৫ সালের ২ জুলাই এ আদালত পুনরায় আত্মস্বীকৃত আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয়। রায়ের পরে একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ করোনা শুরুর আগে শুনানির দিন ধার্য হলেও শুনানি হয়নি এখনও। এদিকে মেয়ের হত্যাকারীর বিচার না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম।

ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম বলেন, ফেলানী হত্যার ১৪ বছর হয়ে গেল এখন পর্যন্ত বিচার পাই নাই। ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টে বিচারটা নিয়া গেলাম, কয়েকবার শুনানির তারিখ দিলেও তা পিছিয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে শুনলাম শুনানি হবে। তবে কবে হবে এর কোন তারিখ পাইনি। আমি মনে করি আওয়ামী লীগ সরকারের কারণে ফেলানী হত্যার বিচার আটকে আছে। আমি আমার মেয়ে ফেলানী হত্যাকারীর বিচার মরার আগে দেখে যেতে চাই। একই কথা জানান ফেলানীর মা জাহানারা বেগম।

তিনি জানান অনেকবার মেয়ে হত্যার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। শেখ হাসিনা সরকার ভারতের বিপক্ষে লড়তে চেষ্টা করেনি। বর্তমান অবৈধ সরকারের কাছে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে মেয়ে হত্যার বিচার প্রার্থনা করেন তিনি। স্থানীয়দের দাবি ফেলানী হত্যার বিচার হলে কমতো শীমান্ত হত্যা। তাই দ্রুত এই বিচারটা করা দরকার।

কুড়িগ্রাম জজ কোর্টের সাবেক পাবলিক প্রসিকউটর এ্যাড. এস এম আব্রাহাম লিংকন জানান, ভারতের মহামান্য সুপ্রিমকোর্টে ফেলানী হত্যামামলার রিট তালিকাভুক্ত রয়েছে। সেটি যত দ্রুত শুনানি হবে ততই মামলাটির অগ্রগতি হবে এবং ফেলানী হত্যার বিচার হলে বাংলাদেশি নাগরিকদের পাশাপাশি ভারতীয় নাগরিকরাও সুরক্ষিত থাকবে।

ফেলানী হত্যা,বিচার
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত