ঢাকা ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফেলানী হত্যার ১৪ বছর আজ

ফেলানী হত্যার ১৪ বছর আজ

কুড়িগ্রাম সীমান্তে কাঁটাতার পার হওয়ার সময় কিশোরী ফেলানীকে গুলি করে হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখেছিল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। সেই ঘটনার ১৪ বছর পূরণ হল আজ। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে এ নৃশংস ঘটনা ঘটে।

বাংলাদেশের উত্তর সীমান্ত ঘেঁষা রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন নুরুল ইসলাম নুরু। অভাবের সংসারের টানাপোড়েন ঘোচাতে ঘটনার ১২ বছর আগে অবৈধ পথে ভারত যান তিনি। সাথে নিয়ে যান স্ত্রী জাহানারা এবং দেড় বছরের মেয়ে ফেলানী-কে। সেখানে বঙ্গাইগাঁও গ্রামে বসবাস শুরু করেন তারা, কাজ নেন ইটভাটায়। ফেলানী যখন ১৩ বছরের কিশোরী তখন বাংলাদেশে তার বিয়ে ঠিক করে পরিবারের লোকজন। বিয়ের জন্য মেয়েকে নিয়ে ২০১১ সালের ৬ জানুয়ারি বঙ্গাইগাও থেকে বাংলাদেশে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন নুরু। আসার সময় মেয়েকে বিয়ের সাজ পড়িয়ে দিয়েছিলেন মা জাহানারা।

পরদিন ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে মই বেয়ে প্রথমে কাঁটাতার পাড় হন বাবা নুরুল ইসলাম। এরপর ফেলানী কাঁটাতার পাড় হতে মই বেয়ে উপরে উঠলে ভারতের ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফের এক সদস্য কাছ থেকে তাকে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে কাঁটাতারে ঝুলে পড়ে বিয়ের সাজে থাকা ফেলানীর নিথর দেহ। প্রায় চার ঘণ্টা পর ফেলানীর মরদেহ কাঁটাতার থেকে নামিয়ে নিয়ে যায় বিএসএফ। ময়নাতদন্ত শেষে একদিন পর বিজিবির মাধ্যমে মরদেহ ফেরত দেয় তারা।

ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, ‘আমার সামনে কোর্টে অমিয় ঘোষ দোষ স্বীকার করেছে। এরপরও তাকে খালাস দেয় কীভাবে? এটা তো বিচার হলো না। বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষায় আছে। আমি অপেক্ষায় এ সরকার যেন বিচারটা চায়। ভারতের কাছে বিচারের দাবিটা যেন তোলে। এটাই চাই আমি।’

ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘মেয়েকে হারিয়ে ১৪টা বছর ধরে কান্তাছি। কত কান্দি আর। বিচার পাইলাম না। আমার পরিবারের জন্য কেউ কিছু করলো না। খুব কষ্টে চলতাছি। এই সরকার যেন বিষয়টা দেখেন।’

ফেলানী বাবাকে সহায়তাকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে ফেলানীর বাবার রিট পড়ে আছে। তারা চাইলে এটার দ্রুত শুনানি শেষ করে রায় দিতে পারে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তা হচ্ছে না। এতে ভারতের বিচার বিভাগের প্রতি বিশ্ববাসীর একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারত দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সমঝোতা করে দ্রুত বিচারটা করা উচিত। ফেলানীর বাবা যাতে ন্যায্য বিচার পায় সেটা নিশ্চিত করা উচিত।

এমন একটি ঘটনার পরও থেমে নেই বিএসএফের সীমান্তহত্যা। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ফেলানীকে হত্যার পর থেকে আজ পর্যন্ত কুড়িগ্রামের বিভিন্ন সীমান্তে দুই ভারতীয়সহ ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।

ফেলানী,সীমান্তহত্যা,কুড়িগ্রাম
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত