লালী উৎপাদন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমি ব্যবসা। আঁখের রস থেকে উৎপাদিত হচ্ছে এই সুস্বাদু রসালো গুড় লালী। ভোজন বিলাসীদের জন্য লালীগুড় ছাড়া পিঠা-পুলির স্বাদ যেন অনেকটাই ফিকে।
শীতের মৌসুম শুরু হতেই উপজেলায় লালী উৎপাদনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা। আখের রস থেকে সনাতন পদ্ধতিতে তৈরি এই রসালো গুড় পিঠা-পুলির সাথে খাওয়ার জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ১০-১২ জন উদ্যোক্তা প্রতিবছর কার্তিক থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত লালী তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৭০ হেক্টর জমিতে আখের আবাদ হয়েছে, যার বেশিরভাগই লালী উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে। আখ সংগ্রহের পর মহিষ দিয়ে মাড়াই করে রস সংগ্রহ করা হয়। এরপর বড় পাত্রে রস জ্বাল দিয়ে ৩-৪ ঘণ্টায় তৈরি হয় লালী।
উদ্যোক্তা জামাল খান বলেন, "লালী তৈরিতে ৮-১০ কানি জমির আখ প্রয়োজন হয়। উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি হলেও প্রতি লিটার লালী ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। ভালো মানের ও নির্ভেজাল হওয়ায় জেলাসহ আশপাশের উপজেলা থেকে ভোজনরসিকরা লালী কিনতে আসেন। সহজ শর্তে কৃষি ঋণ পেলে আমরা এই পেশা টিকিয়ে রাখতে পারব।"
উদ্যোক্তা তাজুল ইসলাম বলেন, "আখ চাষের এক বছর পর ফলন হয়। আখ সংগ্রহের পর মহিষ দিয়ে মাড়াই করে রস বের করা হয়, যা পরে চুলায় জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় সুস্বাদু লালী।"
বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ক্রেতারা জানান, বাজারের গুড়ের তুলনায় সনাতন পদ্ধতিতে তৈরি লালীর মান অনেক ভালো। স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। শীতের দিনে পিঠা-পুলির সাথে লালীর স্বাদ অসাধারণ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, "চলতি মৌসুমে প্রায় দুই কোটি টাকার লালী গুড় কেনা-বেচা হবে। লালীর উৎপাদন বাড়াতে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান এবং আখের উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।"