চার বছর বয়সী শিশুর গলায় একটি ধাতব মুদ্রা (দুই টাকার কয়েন) আটকে গেলেও এক্সরে রিপোর্টে সেই ধাতব মুদ্রা পায়নি ডাক্তার বা রেডিওলজিস্ট। ক্লিনিকে গিয়ে এমন ভুল চিকিৎসায় মরতে বসেছিল লালমনিরহাটের চার বছরের শিশু সাফওয়ান।
গত বৃহস্পতিবার লালমনিরহাট জেলা শহরের যমুনা ক্লিনিকে এমন ঘটনা ঘটে। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার খাদ্যনালি থেকে সেই কয়েন অপসারণ করে সেখানকার ডাক্তার। এতে অল্পের জন্য রক্ষা পায় শিশুটির প্রাণ।
সাফওয়ানের বাবা বিজিবি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তাঁর একমাত্র ছেলে সাফওয়ান একটি কয়েন খেয়ে ফেলেছে- স্ত্রীর কাছ থেকে ফোনে এমন খবর পেয়ে তাড়াহুড়ো করে বাড়ি যান তিনি। মোস্তাফিজুর রহমান নিজেও একজন মেডিকেল এ্যাসিসট্যান্ট। কাজ করেন লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি'র অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যসেবা টিমে। বৃহস্পতিবার দুপুরে একমাত্র ছেলে সাফওয়ান (৪) একটি দুই টাকার কয়েন খেয়ে ফেলার খবরে কোনো রকমে কাজ শেষ করেই বাসায় পৌঁছান তিনি। তৎক্ষণাৎ স্থানীয় যমুনা ক্লিনিকে গিয়ে সার্জারি বিভাগের ডাক্তার বদিউর জামান রবিকে দেখান। ডাঃ বদিউর জামান লালমনিরহাট ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে সার্জারি বিভাগে জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত। তিনি শিশুটিকে দেখে এক্সরে করাতে বলেন। তৎক্ষণাৎ এক্সরে করিয়ে রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বলেন, তার শরীরের অভ্যন্তরে কিছু পাওয়া যায়নি। মোস্তাফিজুর ভালো করে দেখতে বলেন ডাক্তারকে। ডাক্তার আবারও বলেন, কিছু নেই। পরে ক্লিনিকটির পরিচালক আলহাজ্ব হোসেনকে অনুরোধ করেন যেন এক্সরে আরেকবার করে ভালোভাবে দেখেন। পরিচালক আলহাজ্ব ক্লিনিকের রেডিওলজিস্টকে পুনরায় চেক করতে বলেন। রেডিওলজিস্ট নিশ্চিত করে বলেন, অপ্রত্যাশিত কোনো কিছুই শিশু সাফওয়ানের শরীরে নেই। এ অবস্থায় ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান মোস্তাফিজুর। সন্ধ্যার পর খেতে না পেয়ে শিশুটির বমি শুরু হলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে সাফওয়ানের পরিবার। আবারও স্থানীয় ক্রিসেন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্সরে করান। সেখানে স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায় শিশুটির খাদ্যনালিতে একটি কয়েন আটকে আছে। বাধ্য হয়ে রাত দশটার দিকে এ্যাম্বুলেন্সে রংপুরে রওনা হন মোস্তফিজুর। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। পরদিন শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় শনিবার সকালে সেখানকার ডাক্তার এন্ডোস্কপির মাধ্যমে কয়েনটি বের করেন। এরপর থেকে শিশু সাফওয়ান সুস্থ রয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে ডাক্তার বদিউর জামান রবি বলেন, শিশুটির কোনো চিকিৎসা দেয়া হয়নি। আবারও সমস্যা হলে যোগাযোগ করতে বলেছিলাম।
ক্লিনিকের পরিচালক আলহাজ্ব হোসেন বলেন, ছোট্ট একটা ভুল হয়ে গেছে। যদি এক্সরে শিশুটির গলা থেকে করা যেত তাহলে হয়তো প্রথমেই কয়েনটা দেখা যেত।
শিশু সাফওয়ানের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনার পর আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরামর্শে অভিযোগ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ক্লিনিকের পরিচালক আলহাজ্ব হোসেন আমাকে নিষেধ করে বিধায় আর করিনি। তবে আমি চাই আমার ঘটনাটি সবাই জানুক। আমার মত আর কোনো অভিভাবকের যেন এমন বিপদে পড়তে না হয়।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে , লালমনিরহাটে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজি সেন্টারগুলোর ভুতুড়ে রিপোর্টের ভুল চিকিৎসায় বিপাকে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। আর্থিক ও মানসিক হয়রানির শিকার হচ্ছে রোগীর পরিবার। একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এমন ভুল রিপোর্টের চিকিৎসায় দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।
তবে এসব বিষয়ে কথা বলতে লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু রায়কে কল করলে তিনি কলটি কেটে দেন।