তাড়াইল হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটে ভোগান্তিতে রোগীরা
প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:৩৪ | অনলাইন সংস্করণ
রুহুল আমিন, তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসক সংকট, জনবল ঘাটতি, ও অকার্যকর যন্ত্রপাতির কারণে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যে দিন পার করছে। প্রতিদিন উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের হাজারো রোগী এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা নিতে এলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
পাশের উপজেলা করিমগঞ্জ, নান্দাইল, কেন্দুয়া, ইটনা ও মদন থেকেও অনেক রোগী এই হাসপাতালে আসেন। তবে চিকিৎসক সংকটের কারণে সেবা কার্যক্রম ধুঁকছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ১৪৭টি পদের মধ্যে প্রথম শ্রেণির ২১টি পদের মাত্র ৮টি পূরণ হয়েছে। এর মধ্যে দুজন অনুমোদনহীনভাবে অনুপস্থিত এবং একজন কিশোরগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংযুক্ত রয়েছেন। দ্বিতীয় শ্রেণির ৩৬টি পদের মধ্যে ৩১টি পূরণ হলেও পাঁচজন শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন। তৃতীয় শ্রেণির ৬৬টি পদের মধ্যে ৩৮টি এবং চতুর্থ শ্রেণির ২৫টি পদের মধ্যে মাত্র ১১টি পূরণ হয়েছে। অনেকেই সংযুক্তিতে অন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। হাসপাতালে সিজারিয়ান কার্যক্রম চালু থাকলেও এক্সরে মেশিন চালানোর জন্য কোনো টেকনিশিয়ান নেই। এক্সরে করার উপযুক্ত রুমও নেই। ফলে রোগীদের প্রাইভেট ক্লিনিকে বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়। ছোটখাটো অস্ত্রোপচারের জন্যও রোগীদের জেলার হাসপাতালগুলোতে বা প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে হয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৬২ জন প্রসূতিকে সিজার করা হয়েছে। ইনডোর বিভাগে ৭,৯৮১ জন, জরুরি বিভাগে ২১,৮২২ জন এবং আউটডোরে ১,০৮,৯৭১ জন রোগী সেবা নিয়েছেন। কুকুরের কামড়ে ৮৩ জন, যক্ষ্মা রোগে ২৫৯ জন এবং কুষ্ঠ রোগে ২ জন রোগী চিকিৎসা পেয়েছেন। ২০২৩ সালে ৮,২০৫ জন এবং ২০২৪ সালে ১,৭৫২ জন রোগীকে এইচপিভি টিকা প্রদান করা হয়েছে।
প্রতিদিন প্রায় সহস্রাধিক রোগী বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে সেবা নিতে আসেন। তবে চিকিৎসক সংকটের কারণে জরুরি বিভাগের রোগীদের প্রায়শই জেলা হাসপাতালগুলোতে স্থানান্তর করতে হয়। এতে দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যায় এবং সময়মতো সেবা না পাওয়ায় মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন অনেকে। রোগীদের অভিযোগ, "আমরা শত কষ্টে দূর-দূরান্ত থেকে আসলেও ডাক্তারের দেখা পাই না। সিরিয়ালে দুই-তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার পরও ডাক্তার না দেখিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়। কখনও শুধু প্যারাসিটামল ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিয়েই সান্ত্বনা দেওয়া হয়
তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলমাস হোসেন বলেন, জনবল সংকট ও প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম চিকিৎসক রয়েছে ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে। সংকট নিরসনে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছেন আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসকসহ শূন্যপদে জনবল বাড়াবেন। তিনি আরও বলেন, আমরা বারবার নতুন করে চিকিৎসক চেয়ে আবেদন করছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।
আবা/এসএস