উদ্বোধনের অপেক্ষায় যমুনা রেলওয়ে সেতু

উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে উন্নয়নের নতুন দুয়ার

প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:৫৩ | অনলাইন সংস্করণ

  এসএম তফিজ উদ্দিন, সিরাজগঞ্জ

যমুনা নদীর বুকে নির্মিত যমুনা রেলওয়ে সেতু এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। সেতুটি চালু হলে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন এক নতুন পর্যায়ে পৌঁছাবে। আর এ সেতুর অদূরে দক্ষিণে অবস্থিত দেশের অন্যতম বঙ্গবন্ধু সেতু। সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের পাশাপাশি উত্তরলেন দিয়ে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। এ রেল সেতু উদ্বোধনের পর বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেললাইন থাকলেও রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের এ অন্যতম সেতুতে ২০০৮ সালে ফাটল দেখা দেয় এবং সেতু দিয়ে চলাচলকারী ট্রেনের গতিসীমা কমিয়ে দেয়া হয়। এতে ক্রমাগতভাবে যাত্রীদের দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। জনস্বার্থে এ দূর্ভোগ নিরসনে সে সময়ে আওয়ামীলীগ সরকার সেতুর ৩০০ মিটার অদূরে দেশের দীর্ঘতম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। সরকার পরিবর্তনের পর এ সেতুর নামকরণ হয়েছে যমুনা রেলওয়ে সেতু। 

ইতিমধ্যেই এ রেলওয়ে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ এবং সর্বোচ্চ গতিতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলও করেছে। বৃহত্তর এ রেলওয়ে সেতু এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। তবে এটি চালুর পর বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেল সংযোগ থাকলেও ট্রেন চলাচল করবে না। 

ওই রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, নব-নির্মিত রেলসেতু দিয়ে ১২০ কিলোমিটার গতিতে দুটি লাইনে সফলভাবে চালানো হয়েছে পরীক্ষামূলক ট্রেন। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় এ সেতু। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই উদ্বোধনের কার্যক্রমের প্রক্রিয়া চলছে। 

২০২০ সালের মার্চের প্রথম দিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকের ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতু নির্মাণের পরিকল্পনা অনুমোদন করে তৎকালীন সরকার। এ সেতু দিয়ে বর্তমানে ঢাকার সাথে দক্ষিণাঞ্চলে যথানিয়মে ট্রেন চলাচল করছে । যমুনা রেলওয়ে সেতু  চালুর পর আন্তঃনগর, লোকাল, কমিউটার ও মালবাহী ট্রেনসহ প্রায় ১’শ ট্রেন প্রতিদিন চলাচল করতে পারবে। 

২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এ সেতুর নির্বাচিত ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে জাপানি কোম্পানি ওটিজি ও আইএইচআই জয়েন্ট ভেঞ্চার। ২০২০ সালের আগস্টে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। 

পরে এ ব্যয় বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা দাঁড়ায়। এরমধ্যে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি ২ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। এ প্রকল্প ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হয়। এ সেতুর পশ্চিমপাড়ে বিসিক শিল্পপার্কের কাজও প্রায় শেষ। 

এছাড়া এ অঞ্চলের উদ্যোক্তারা বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ নিচ্ছেন। এদিকে এ রেলসেতু চালু হওয়ার পর সিরাজগঞ্জসহ উত্তর ও দক্ষিাণাঞ্চল উন্নয়নে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে বিশিষ্টজনেরা এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।