সাঙ্গুর দু'তীরে চীনা বাদামের বাম্পার ফলন, নজর কাড়ছে পর্যটকের

চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ

প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:০৩ | অনলাইন সংস্করণ

  এএইচ সেলিম উল্লাহ, বান্দরবান থেকে ফিরে

বান্দরবানের সাঙ্গু নদীর দু'তীরে জেগে উঠা চরে সবুজের সমারোহ নজর কাড়ছে পর্যটকদের। জেগে উঠা দু'তীরে চীনা বাদামসহ নানা ফলনে বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছেন কৃষকরা। প্রতিদিন সাঙ্গু নদীতে নৌকা ভ্রমণের পাশাপাশি সবুজের সমারোহ উপভোগ করতে যাচ্ছে পর্যটকরা। দু'তীরের কৃষকরা ভ্রমণ পিপাসুদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা যায়।

নদীর তীরে চাষ হওয়া চীনা বাদাম পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার সাতটি উপজেলার নদীর পাড়ে এখন একই চিত্র।চাষিরা জানান, প্রতিবছর অক্টোবর থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাদামের বীজ লাগানো হয়। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ক্ষেত থেকে এই বাদাম তোলা শুরু হয়। বাদামের বীজ লাগানোর আগে হালচাষ দিয়ে মাটি সামান্য নরম করে নিতে হয়। আর পরিষ্কার করতে হয় আগাছা। তারপর সারি সারি করে লাগানো হয় বাদাম বীজ। সাঙ্গু নদীর চরের মাটি উর্বর হওয়ায় দিতে হয় না অতিরিক্ত সার কিংবা কীটনাশক। তিন মাসের মধ্যেই পরিপূর্ণ বাদাম ফলে। তাই অল্প কষ্টে অধিক লাভে খুশি বাদাম চাষিরা।

উৎপাদিত চীনাবাদাম গুণে মানে ভালো ও খেতে পুষ্টিকর হওয়ায় বাজারে চাহিদাও ভালো। প্রতি কেজি বাজারে বিক্রি হয় ৫০-৮০ টাকায়। উর্বর পলি, দোআঁশ মাটি ও আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ফলনও হয়েছে ভাল।

কৃষকরা জানান, ফলন ভালো হয়েছে। আমরা প্রতিবছর দুই তিন লাখ টাকা আয় করি। এ উপার্জন দিয়েই আমাদের সংসার চলে। সরকার আমাদের সহযোগিতা করলে আরও লাভবান হব।

উৎপাদিত বাদাম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকার ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা জানান, বাদাম সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে।

পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় বিদেশে রফতানি করা সম্ভব বলে মনে করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বান্দরবানের উপপরিচালক এস এম শাহ্ নেয়াজ। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের অনেক উদ্যোক্তা বান্দরবানের পার্বত্য জেলার চীনাবাদাম বিদেশে রফতানি করছেন।'

উপপরিচালক এস এম শাহ্ নেয়াজ আরো বলেন, এ বছর বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় ২ হাজার৩ শত, ১৭ হেক্টর জমিতে চীনা বাদাম, শীতকালীন সবজি ৪২৭৩ হেক্টর ও ৮০৩ হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ করা হয়েছে। 

এই কর্মকর্তা মতে, প্রতিবছরের মতো, এই বছরেই চীনাবাদাম সহ সকল চাষাবাদে বাম্পার ফলনের আশা করেন তিনি।

বান্দরবানে ভ্রমণে যাওয়া উখিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সাঈদ মোহাম্মদ আনোয়ার বলেন, পাহাড়ঘেরা বান্দরবানের ভ্রমনটি অত্যন্ত আনন্দদায়ক। সাঙ্গু নদীতে নৌকা  ভ্রমণে গিয়ে সবুজের সমারোহ উপভোগ করে মনটি ভরে উঠে।

একই কথা জানালেন ঢাকার বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা মুরশিদুল আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, 'দু'তীরে বাদাম চাষীদের যদি সরকার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তা হলে চাষীরা জেগে উঠা চরে চাষাবাদ করে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়ক হবেন।'

বান্দরবানের ইকোসেন্স রিসোর্ট এর পাবলিক রিলেশন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন,  মৌসুম ছাড়াও সারাবছর বান্দরবানে পর্যটকের আনাগোনা থাকেন। নীলাচল, নীলঘিরি সহ অন্য পর্যটন স্পষ্টে ঘুরার পরও পর্যটকরা সাঙ্গু নদীতে নৌকা ভ্রমে যান। ওখানে সবুজের সমারোহ দেখে পর্যটকরা মুগ্ধ হন। এবং বাড়তি আনন্দ উপভোগ করেন।