ঢাকা ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চাঁদপুরে মিষ্টি কুমড়ার সঠিক দাম না পেয়ে দিশেহারা কৃষক

চাঁদপুরে মিষ্টি কুমড়ার সঠিক দাম না পেয়ে দিশেহারা কৃষক

চাঁদপুর জেলাধীন হাজীগঞ্জে এ বছর প্রচুর পরিমাণে কুমড়া আবাদ হয়েছে। এতে করে এখন আর কুমড়া উৎপাদনকারী কৃষক এ বছর সঠিক দাম পাচ্ছে না বলে অভিযোগ শতশত কৃষকদের। স্থানীয় বাজারে প্রতি পিচ কুমড়া ৬ থেকে ৭ কেজি ওজনের ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে।

যার কারণে কুমড়া বিক্রিতে সঠিক মূল্য না পাওয়ায় কুমড়া খেতে থেকে পচে যাচ্ছে। সামান্য পরিমাণ যাও বিক্রি হচ্ছে,তা’ জলের দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। এতে করে কৃষকরা তাদের উৎপাদন খরচ না’উঠায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ বছর প্রায় ৬১৮ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়।

এ উপজেলায় গত বছরের চাইতে দ্বিগুণ জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে এ হাজীগঞ্জে । আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হলেও বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন শতশত কৃষকরা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকার না আসায় জমিতেই পাকতে শুরু করেছে কুমড়া। তার মধ্যে আবার অনেক জমিতে কুমড়া থেকে পচেঁ যেতে দেখা যায়। দ্রুত বিক্রি করতে না পারলে জমিতে বোরো আবাদ নিয়ে দেখা দিবে মারাত্মক শঙ্কা। তবে কৃষকদের এসব কুমড়া বাজারে নিয়ে বিক্রির পরামর্শ দিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কুমড়ার কম-বেশি আবাদ হলেও হাজীগঞ্জের ডাকাতিয়া নদী এলাকায় পলিমাটি ঘেরা বলাখাল, শ্রীনারায়ণপুর, ও অলিপুর গ্রামে চাষ করা হয়েছে প্রচুর মিষ্টি কুমড়া। সাধারণত গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করা হয়। এবছর এলাকায় মিষ্টিকুমড়ার পাশাপাশি খিরাই ও শসার আবাদ হয়েছে এবং ফলনও ভালো হয়েছে।

হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, মৌসুম ভিত্তিক নিরাপদ শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসল আবাদে কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করা হয়। এ অঞ্চলের মাটি অপেক্ষাকৃত উর্বর। তাই শাকসবজি আবাদে সময়, শ্রম ও খরচ কম হওয়ায় প্রতি বছরই মিষ্টি কুমড়ার আবাদ বাড়ছে। এ বছর উপজেলার প্রায় ৬১৮ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে।

কৃষকরা জানান, চলতি মৌসুমে বলাখাল, শ্রীনারায়নপুর গ্রামজুড়ে চাষাবাদ করা হয়েছে হাইব্রিড জাতের কুমড়া। এ কুমড়া এখন বিক্রয় হওয়ার সময়। প্রতি বছর এ সময়ে জমিনের প্রায় ৬০ ভাগ কুমড়া বিক্রি হয়ে যায়। এ বছর কুমড়া আবাদ করে বিপাকে পড়েছেন এ এলাকার চাষীরা। কারণ কুমড়া জমিতে পেকে রয়েছে নেই কোন পাইকার বা ফরিয়া।

বলাখাল এলাকার কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, প্রতি বছর এ সময়ে ঢাকার কারওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালি ও লক্ষ্মীপুর থেকে পাইকার এসে উৎপাদিত কুমড়াগুলো কিনে নিয়ে যেত। এ বছর পাইকারদের একেবারে দেখা মিলছে না। ফলে বিপাকে পড়েছেন অসংখ্য চাষীরা। যদি আর ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে কুমড়াগুলো বিক্রয় করতে না পারে তাহলে মাঠে বোরো ধান চাষ করা সম্ভব হবে উঠবে না।

অলিপুর গ্রামের কৃষক ছিদ্দিক বলেন, প্রতিবছর ‘উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করতে আমাদের চিন্তা করতে হতো না। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে জমি থেকে কিনে নিতো। প্রতি পিচ কুমড়া ৫০ থেকে ১০০টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হয়েছে। এবার কুমড়ার বাজার দরতো নেই, পাইকারও নেই। স্থানীয় বাজারে ৬ থেকে ৭ কেজি ওজনের একটি কুমড়া ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রয় করতে হচ্ছে। তবুও চাহিদা মত ক্রেতা মিলছেনা।

হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম জানান, এ বছর হাজীগঞ্জ উপজেলায় মিষ্টিকুমড়ার আবাদ হয়েছে বিগত বছরের চাইতে দ্বিগুণ। ২০২৩ সালে আবাদ হয়েছে ২৮৬ হেক্টর জমিতে। এ বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে ৬১৮ হেক্টরেরও বেশি জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে। ক্রেতা না থাকায় বিপাকে পড়েছে কৃষককুল। তবে আমরা কৃষকের এসব মিষ্টি কুমড়া বিভিন্ন পাইকারি হাট ও বাজারে নিয়ে বিক্রয় করার পরামর্শ দিয়েছি।

কৃষক,মিষ্টি কুমড়া,চাঁদপুর
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত