ঢাকা ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কক্সবাজারে ২০ স্পটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ছিনতাইকারী চক্র

ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে নাম্বারবিহীন মোটরযান
কক্সবাজারে ২০ স্পটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ছিনতাইকারী চক্র
সিসি ক্যামেরায় ধারনকৃত ছিনতাইকারীদের গতিবিধির ছবি

কক্সবাজার শহরের ২০ স্পটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কয়েকটি গ্রুপে নিয়ন্ত্রিত ছিনতাইকারী চক্র। এসব চক্রদের শনাক্তে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যার কারনে কক্সবাজার শহর অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। গেল কয়েকদিনে কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কসহ পর্যটন জোনে কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মহলকে। এমনকি এই সব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ত বনে গেছে। পর্যটক, সাধারন মানুষের পাশাপাশি ছিনতাইকারীর কবল থেকে রক্ষা পায়নি খোদ কক্সবাজার শহরে টহলরত পুলিশ। টহল পুলিশকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় রনি নামের একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে ঘটনায় জড়িত থাকা সহ নানা অপরাধের বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

পুলিশের নিস্ক্রিয়তায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে বলে দাবি করেন সচেতন মহল। কক্সবাজার শহর এমনটি, অনিরাপদ হয়ে উঠেছে চলন্ত বাহনে মুঠোফোন ব্যবহারও অনিরাপদ। বেশির ভাগ ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহার হচ্ছে নাম্বারবিহীন মোটরযান।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গত এক বছরে জেলায় ১৪টি ডাকাতি মামলায় ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপরদিকে ৪০টি দস্যুতা মামলায় গ্রেফতার হয়েছে ৪৯ জন। এছাড়া মানবপাচারের ১২টি মামলায় ১৫৮ জন ভিকটিম উদ্ধার করা হয়েছে। ১৪১টি চুরি ও ৪২টি সিধেঁল চুরির ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় কয়েকজন ও পুলিশের তথ্য সূত্র বলছে, বিশেষ করে কক্সবাজার শহরের কলাতলী প্রাইমারি স্কুল, কলাতলী ডিভাইন রোড, সমুদ্রসৈকতের ঝাউবাগান, সৈকত পাড়া, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সামনে, কটেজ জোন, হোটেল কল্লোলের সামনে, জাম্বুর মোড়, হাসপাতাল সড়ক, পেট্রোল পাম্প, পান বাজার, গোলদিঘীর পাড়ে কবরস্থান রোড, বৈদ্যঘোনা ১০ তলার বিল্ডিংয়ের সামনে, বৌদ্ধ মন্দির গেইট, জাদিরাম পাহাড়ের উপরে, ক্যাং মাঠে, মাইক সাভির্স রোড, খুরুশকুল রাস্তার মাথা, খুরুশকুল পুরাতন ব্রীজ, বিজিবি ক্যাম্পের আম গাছ তলা ও বাস টার্মিনাল এলাকায় ছিনতাইকারী চক্র দাপিয়ে বেড়ান। তারা সুযোগ বুঝে ছিনতাই সহ অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ( ৯ জানুয়ারি) কক্সবাজার শহরের ডিভাইন রিসোর্টের পাশে ছিনতাইয়ের শিকার হন আবরাহাম সহ তিন বন্ধু। তিন বন্ধু মিলে সৈকতে আড্ডা দিতে যান। ফেরার পথে ডিভাইন ইকো রিসোর্টের পাশে মাস্ক পরা পাঁচজন এসে তাদেরকে দিকে ছুরি চালায়। ছিনতাইকারীরদল মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে যায়। এর মধ্যে তুহিনের পায়ে বেশ কয়েকবার ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একই দিন বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কের এন্ডারসন রোডে এক এনজিওকর্মী ছিনতাইয়ের শিকার হন। সোশ্যালমিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা গেছে ওই এনজিও কর্মীকে ভোরের আলোতে গতিরোধ করে। এক পর্যায়ে মাটিতে পেলে তাকে মারধর করে এবং মালামাল ছিনিয়ে নেয়। সর্বশেষ গত ৯ জানুয়ারি রাত সাড়ে আটটার দিকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দুর্বৃত্তরা খুলনার কাউন্সিলর গোলাম রাব্বানীকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া গত শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) ভোরে কক্সবাজার শহরের গোলদিঘি পাড় এলাকায় মোবারক নামের টহলরত এক পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় একদল ছিনতাইকারী চক্র। কক্সবাজারে শুধু ছিনতাইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, বাসা, বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্টানে দুর্ধর্ষ চুরি সহ পার্কিং থেকে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাও নিত্যদিনের।

ভুক্তভোগী এনজিওর নারী কর্মীর ইয়াসিন তোফা জানান, ঘটনার দিন ভোরে তার স্ত্রী কর্মস্থলে যাওয়ার সময় আমার বাসা থেকে ৫ মিনিট দুরত্বে খবর বিতান সড়কে তিনজন ছিনতাইকারী আমার স্ত্রীকে পেছন দিয়ে মুখ চেপে ধরে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর তার বুকের উপর বসে গলায় ছুরি ধরে হাতে থাকা দুইটি স্বর্ণের আংটি ছিনিয়ে নেয়।এরপর ব্যাগ ছিনিয়ক নিয়ে ব্যাপক মারধর করে। এক পর্যায়ে আমার স্ত্রী ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারায়।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক অপরাধ নিয়ে কাজ করা এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গেল বৃহস্পতিবার এনজিও কর্মী ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া ব্যাগটিও উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যদিকেড় শুক্রবার ভোরে কক্সবাজার শহরের গোলদিঘি পাড়ে টহল পুলিশের উপর ছুরিকাঘাতে ঘটনায় জড়িত রনি নামের একজন দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে পুলিশ সদস্য মোবারককে ছুরিকাঘাত করার বিষয়টি আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা মনে করছেন, কক্সবাজার শহরে জনসংখ্যার চেয়ে ছিনতাইকারীর সংখ্যা বেশি।

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কক্সবাজার জেলায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। প্রতিদিন জেলায় হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই ও অপহরণসহ নানা ঘটনা ঘটছে। এভাবে চলতে থাকলে পর্যটন শিল্প ধ্বংস হতে বেশি সময় লাগবে না। স্থানীয়দের মধ্যে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর নীরবতার সুযোগে অপরাধীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে।'

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সাহিদুল ওয়াহেদ সাহেদ বলেন, 'জেলাজুড়ে অপহরণ, ছিনতাই ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বেশ উদ্বেগজনক। এইসব ঘটনায় প্রশাসন কোনভাবে দায় এড়াতে পারে না।'

গেল ৫ আগস্টের পর থেকে প্রশাসনের নমনীয় ভাবই অপরাধ বেড়ে যাওয়ার কারন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ছিনতাইসহ অপরাধ রোধে কাজ করা কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি'র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'গেল ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান পর পুলিশের নিস্ক্রিয়তার সুযোগে ছিনতাই চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। ইতিমধ্যে ডিবি, থানা পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে দুর্ধর্ষ কয়েকজন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে। অন্যদের গ্রেফতারের ডিবির পৃথক টিম মাঠে কাজ করছে।'

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশী কার্যক্রমে একটু ভাটা পড়েছি। এই সুযোগে অপরাধী চক্র মাথা চড়া দিয়ে উঠছিল। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিছিন্ন কিছু ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। অপরাধ নির্মূলে পুলিশ কাজ করছে।

তিনি আরো বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ বেশির ভাগ মোড়ে সড়ক বাতি জ্বলে না। অপরাধীরা এর সুযোগও নেয়। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে পৌরসভা এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগকে তাগাদা দেয়া হয়েছে।'

কক্সবাজার,ছিনতাইকারী
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত