খুলনার সাবেক কাউন্সিলর টিপু হত্যাকাণ্ড: সেই নারী সঙ্গীসহ আটক ৩
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:১৫ | অনলাইন সংস্করণ
এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন হোটেল সীগালের সামনে খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী টিপু হত্যার মিশনে অংশ নেয়া সেই নারী সঙ্গীসহ তিনজনকে আটক করেছে কক্সবাজার জেলা পুলিশের একটি দল। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সিলেটের মৌলভীবাজার এলাকার থেকে তাদের আটক করা হয়েছে বলে গতকাল সন্ধ্যায় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ এক ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন।
আটককৃতরা হলেন, শাহরিয়ার পাপ্পু (২৯), গোলাম রসুল (২৫) ও ঋতু (২৩)।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতসংলগ্ন হোটেল সি গালের সামনে টিপুকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে টিপুর বোনের স্বামী ইউনূছ আলী শেখ কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন।
এদিকে হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে দুজনকে আটক করেছে র্যাব-১৫। এই হত্যার ঘটনার পর থেকে অনুসন্ধানে শুরু করেন কক্সবাজার জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশের পৃথক টিম মাঠে কাজ করেছিল। তার ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাতে সিলেটের মৌলভীবাজার এলাকা থেকে খুনে মিশন বাস্তবায়নকারী তিনজনকে আটক করেন। ওই সময় তাদের কাজ থেকে হত্যার কাজে ব্যবহূত অস্ত্রটিও উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার পর র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ইফতেখার ও টিপু কক্সবাজারে আসেন। তারা কক্সবাজার শহরের কলাতলী সড়কের হোটেল গোল্ডেন হিলে ওঠেন। তবে হোটেলের ‘অতিথি লিপিবদ্ধ বই’-এ দেখা গেছে, সকাল ৭টায় ইফতেখার ও টিপুর সঙ্গে রুমি (২৭) নামের এক নারীও হোটেলে ওঠেন।
হোটেল গোল্ডেন হিলের ম্যানেজার মোহাম্মদ শফিক বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে টিপুসহ তিনজন হোটেল আসেন। টিপু হোটেলটির দুই কক্ষবিশিষ্ট ৭০০৩ নম্বর ফ্ল্যাটে ওঠেন। একটি কক্ষে টিপু এবং অপরকক্ষে দুজন অবস্থান করছিলেন। সন্ধ্যার পর টিপু হোটেল থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি।
র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক আরও বলেন, আমাদের হাতে আসা হোটেলটির অভ্যর্থনা কক্ষের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৩১ মিনিটে ওই নারীসহ টিপু হোটেল থেকে বেরিয়ে যান। এরপর রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে হোটেল সি গালের সামনের ফুটপাতে টিপু দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন। রাত ১২টার পর ইফতেখারকে ওই হোটেল থেকে আটক করে র্যাব। তবে রুমি পলাতক রয়েছেন।
খুনের শিকার টিপু দৌলতপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চরমপন্থি নেতা শহিদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদকে (৪২) হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। ২০১৫ সালের অক্টোবরে দৌলতপুর খান এ সবুর রোডে ইসলামী ব্যাংকের সামনে শহিদুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আসা হোটেলটির অভ্যর্থনা কক্ষের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৩১ মিনিটে ওই নারীসহ নিহত কাউন্সিলর টিপু হোটেল থেকে বেরিয়ে যান। রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতসংলগ্ন হোটেল সি গালের সামনের ফুটপাতে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন গোলাম রব্বানী টিপু। তারপর থেকে রুমি নামে ওই নারী পলাতক ছিল।
মামলার বাদী ইউনূছ আলী শেখ বলেন, নিহত গোলাম রাব্বানী টিপু ৮ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে ঢাকা থেকে বাসে কক্সবাজারে যান। সকাল ৭টার দিকে নেমে হোটেল গোল্ডেন হিলে ওঠেন। পরবর্তী সময়ে তার স্ত্রী নূরজাহান বেগম তাকে (ইউনূছ) রাত ১০টার দিকে জানান, তার ভাই টিপুকে কক্সাবজারে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, কক্সবাজারে টিপুর চিংড়ি হ্যাচারি রয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে তিনি এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সেই সুবাদে এখানকার অনেকে তাকে চেনেন। ৫ আগস্ট থেকে এলাকা থেকে সরে গিয়েছিলেন টিপু। তারপর বেশ কয়েকবার বাড়ির সামনে অস্ত্রের মহড়া দিয়েছিল সন্ত্রাসীরা।
র্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ধারণা, ঘটনাস্থলে পড়েছিল টিপুকে লক্ষ্য করে করা গুলির খোসা। সে খোসা ৯ এমএম ইউএসএর প্যারাবলিয়াম ৯.৯ মিলিমিটার পিস্তলের। তা থেকে বোঝা যাচ্ছে, এটি প্রশিক্ষিত কোনো কিলার এ হত্যাযজ্ঞ চালান।