কক্সবাজার জেলা প্রশাসনে 'হাসিনার ভূত'
নৈশভোটের মাস্টারমাইন্ড ইয়ামিন বহাল তবিয়তে
প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:১৩ | অনলাইন সংস্করণ
এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ঘিরে এখনো স্বৈরাচার শেখ হাসিনার 'ভূত' বিরাজমান রয়েছে। গেল কথিত জাতীয় সাংসদ নির্বাচনে নৈশভোটের মাস্টারমাইন্ড অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. ইয়ামিন হোসেন এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে।
যার কারণে স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তার অপসারণ দাবি জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যোদ্ধারা কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
তথ্য অনুসন্ধান দেখা গেছে, গেল ২০২৩সালের ৯ জুলাই কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) হিসেবে যোগদান করেন মো.ইয়ামিন হোসেন। যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এমনকি কি তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ঝুপড়ি দোকানি থেকে শুরু করে সর্বত্র বিচ কর্মী নিয়োগ করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠে। যা প্রথম সারির গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। পরে তাকে ওখান থেকে সরিয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক গত ২৭ নভেম্বর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক) হিসেবে পদায়ন করেন। ওখানেও তিনি নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। তার এইসব অপকর্ম আড়াল করে নতুন জেলা প্রশাসকের চোখে দোলা দিয়ে গত কয়েকদিন আগে ভাগিয়ে নেন জেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ও দুর্নীতিগ্রস্ত সেই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্বের চেয়ারটি। রাজস্বখাতে তার পদায়ন হওয়ার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। রাজস্ব শাখায় তার পদায়নের বিষয়টি নজরে আসলে দ্রুত সময়ের মধ্যে অপসারণের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যোদ্ধারা।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, এডিসি মো. ইয়ামিন হোসেন কক্সবাজারে যোগদানের পূর্বে 'বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (আদালত-১) পদে কর্মরত ছিল। ওখানেও তিনি নানা অনিয়ম জড়িত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইয়ামিন হোসেনের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটদের ব্যবহার করে ছাত্র আন্দোলন দমনে স্বৈরাচারী পদক্ষেপ নেওয়া, বিরোধী মতের ছাত্রদের ওপর নিপীড়ন চালানো এবং সমুদ্র সৈকতের ঝালমুড়ি বিক্রেতাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ তোলা হয়েছে। এসব চাঁদা আদায়ের জন্য বিচ কর্মীদের ব্যবহার করা হতো।
শিক্ষার্থীরা জানান, ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজারের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ডিসি দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন এডিএম ইয়ামিন। ওই নির্বাচনে প্রশাসনের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা নিশিরাতে ভোট ডাকাতি, ছাত্রদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতনসহ বিভিন্ন অনিয়ম হয়েছে।
ছাত্র আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, আন্দোলন দমাতে প্রশাসন ছাত্রলীগ ও পুলিশকে ব্যবহার করে গুলি, গ্রেপ্তার এবং নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে।
স্মারকলিপিতে ছাত্রনেতারা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. ইয়ামিন হোসেনের অপসারণের পাশাপাশি আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপন করেন।
সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, মো. ইয়ামিন হোসেনমসহ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের শাস্তিমূলক বদলি। ছাত্রদের ওপর হামলায় জড়িত প্রশাসন, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের আইনের আওতায় আনা।
অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. ইয়ামিন হোসেন 'প্রতিবেদকের প্রশ্ন উত্তরে কোন ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি।
যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি স্মারকলিপি পেয়েছি। তারা গত ৫ আগস্টের আগে যারা বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত ছিলেন, তাদের অপসারণের দাবি জানিয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
এডিসি রাজস্ব মো. ইয়ামিন হোসেন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান।