ঢাকা ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাবনা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসক ও জনবল সংকট

সেবা বঞ্চিত প্রসূতি মা ও শিশুরা
পাবনা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসক ও জনবল সংকট

প্রসূতি সেবার জন্য প্রতিষ্ঠিত পাবনার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি চিকিৎসক ও জনবল সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে। প্রয়োজনীয় সুবিধা না থাকায় প্রসূতি মা ও শিশুরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সরেজমিনে জানা গেছে, পাবনার শহরের গোবিন্দা এলাকায় ব্রিটিশ আমলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সেবা প্রদানের লক্ষ্যে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৫ সালে এটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের অধীনে আনা হয়। ৩০ শয্যার এ হাসপাতালের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সীমিত হলেও জনবল সংকট এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে সেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

পাবনা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের (হাসপাতাল) একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালের স্থায়ী পদের সংখ্যা ৭টি হলেও কোনো পদের জন্য স্থায়ী জনবল নেই। একজন চিকিৎসক অতিরিক্ত দায়িত্বে কাজ করছেন। প্রসূতি ও শিশুদের জন্য আলাদা চিকিৎসক না থাকায় এবং অ্যানেস্থেশিয়া বিশেষজ্ঞ না থাকায় ব্যথামুক্ত ডেলিভারি সম্ভব হচ্ছে না। জরুরি আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবল নেই, যা প্রসূতি সেবায় বড় বাধা।

গোবিন্দা এলাকার বাসিন্দা মাফুজ আলম জানান, প্রতি সপ্তাহে দু’দিন এখানে বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। ডাক্তার কম থাকায় সঠিকভাবে রোগীরা সেবা পাচ্ছেন না। ওষুধ সরবরাহের পরিমাণও খুবই কম। অধিকাংশ ওষুধ বাইরে থেকেই কিনতে হয়। তিনি আরো বলেন, অন্যান্য ক্লিনিকে গেলে সিজারের প্রবণতা বেশি থাকলেও এখানে নরমাল ডেলিভারিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এজন্য প্রসূতি এখানে বেশী আসেন।

চর সাধুপাড়া থেকে স্ত্রী ফেরদৌসী খাতুনের ডেলিভারি করাতে আসা স্বামী বাবুল হোসেন বলেন, এখানে মাত্র একজন ডাক্তার, আয়া দু’একজন। নার্সও কম। যার জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সমস্যা আছে। রোগীরা চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন কোনোমতে। ডাক্তারসহ দরকারি আয়া নার্স থাকলে এ সেবা আরও ভালো হতো।

গোবিন্দের স্থানীয় বাসিন্দা মোবারক হোসেন বাবর বলেন, আমি এই হাসপাতালে জন্ম নিয়েছি। আমার জন্মের পর হাসপাতালটির যে অবস্থা ছিল এখনো ঠিক সেই অবস্থাই আছে। একজন মাত্র ডাক্তার। তিনিও কখনো কখনো থাকেন না। তখন রোগীরা অন্য ক্লিনিকে যায়। ফলে অযথা সিজারের শিকার হয়, রোগীদের ব্যয় বাড়ে। কর্তৃপক্ষের উচিত হাসপাতালটির দিকে নজর দেওয়া। জনবল বাড়ানোসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নও প্রয়োজন।

পাবনা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের (হাসপাতাল) অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক) উর্মি সাহা জানান, নার্স, আয়া ও চিকিৎসক থেকে শুরু করে সবখানেই আমাদের জনবলের ঘাটতি রয়েছে। পর্যাপ্ত জনবল ও প্রয়োজনীয় বরাদ্দের মাধ্যমে রোগীদের সর্বোচ্চ মানের সেবা দেওয়া সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, এরমধ্যেই আমরা প্রসূতি ও শিশুর সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এখানে মা ও শিশুদের সেবা দেওয়ার কথা। কিন্তু মায়ের পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করতে পারলেও শিশুর তেমন সেবা আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয় না। কারণ এখানে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। ফলে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বাচ্চার কোনো সমস্যা হলে বাইরে পাঠাতে হয়। এছাড়া নরমাল ডেলিভারি এখানে ব্যাপক হয়। নরমাল ডেলিভারিতে ব্যথার জন্য গর্ভবতীদের ভয় বেশি। এক্ষেত্রে একজন অ্যানেস্থেশিয়া চিকিৎসক হলে ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি সম্ভব। এছাড়া আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট ও জনবল বরাদ্দসহ হাসপাতাল সম্প্রসারণ প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

পাবনা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র,চিকিৎসক,সংকট
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত