ঢাকা মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পদ্মায় মাটি কাটার মহোৎসব, হুমকিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ

পদ্মায় মাটি কাটার মহোৎসব, হুমকিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী বিভিন্ন জায়গায় চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। অবৈধভাবে মাটি কাটার ফলে প্রতি বছর ক্ষতির মুখে পড়তে হয় স্থানীয়দের। পাশাপাশি হুমকির মুখে রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলোও।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার পদ্মা নদীর ৫ ও ৬নং নদী রক্ষা বাঁধসংলগ্ন এলাকায় অবৈধভাবে মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ বেশি। স্থানীয়রা বলছেন, বাঁধ থেকে মাত্র ১৫০-৩৫০ মিটার দূরে তোলা হচ্ছে মাটি। এছাড়া নদী তীরের পাশে যেসব কৃষিজমি রয়েছে সেগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তা পোহাতে হচ্ছে কৃষকদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় একমাস ধরে প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত পদ্মা নদী থেকে ট্রাক্টরে করে মাটি-বালু আনা চলছে। এভাবে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক্টর মাটি-বালুমাটি বিভিন্ন ইটভাটা, প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি ভরাট হিসেবে চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এই মাটি বিক্রি করে একটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ-লাখ টাকা। অনবরত ট্রাক্টর ভর্তি মাটি পরিবহনের কারণে ধুলোবালিতে রাস্তার পাশের বাসিন্দাদের প্রচণ্ড দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু মাটি চক্রটি অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকরা ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না।

সরেজমিনে ৬নং বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ৩টি স্কেভেটর মেশিন দিয়ে দেদারসে কাটা হচ্ছে পদ্মার মাটি। মাটি নিয়ে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে ৪টি ট্রাক্টর এবং একটিতে মাটি বোঝাই করা হচ্ছে। ট্রাক্টরে মাটি বোঝাই করতে সময় লাগছে মাত্র ১০-১৫ মিনিট। এরপর ছুটছে বিভিন্ন ইটভাটা, প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি ভরাটের জন্য। এভাবেই দিন-রাত চলছে মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ।

ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেল অবৈধভাবে মাটি কাটা চক্রের সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তির নাম। তারা কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই ফায়দা লুটছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মাসুম আলী ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত পদ্মার মাটি তোলার কাজ হয়। ভেকু (স্কেভেটর) দিয়ে এসব মাটি তোলেন প্রভাবশালী মহলের সদস্যরা। পরে মাটিগুলো তুলে ট্রাক্টর করে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়। মাটি পরিবহন করা ট্রাক্টরগুলো খুবই বেপরোয়া। যখন-তখন ঘটতে পারে সড়ক দুর্ঘটনা। কয়েকদিন আগেই ট্রাক্টর চাপায় স্থানীয় একজন আহত হয়েছেন।

অবৈধভাবে মাটি কাটার বিষয়ে চক্রটির একজন সদস্যের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেন। তিনি জানান, আমি এসব কাজের সঙ্গে জড়িত নই। আমার দ্বারা এসব কাজও হয়না। আমি ব্যবসা-বাণিজ্য করি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মোসা. ফাতেমা খাতুন বলেন, এখানে মাটি কাটার বিষয়ে আমি আমার কর্তৃপক্ষকে অবগত করি। তারপরের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. তাছমিনা খাতুন বলেন, সম্প্রতি উপজেলার কয়েক জায়গায় অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করার অপরাধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এরমধ্যে সুন্দরপুরের ৬ নং বাঁধ এলাকাও আছে। আমাদের অভিযান আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, যারা মাটি কাটছে তারা অত্যন্ত গোপনে রাতের বেলাতে কাটছে। আমরা তাদের প্রশ্রয় দিইনি আর প্রশ্রয় দেয়ার সুযোগও নেই।

পদ্মা,মহোৎসব,, হুমকিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ,বাঁধ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত