দিনাজপুরে জেলার গ্রামাঞ্চলের ধনী পরিবারে ধান রাখার জন্য শোভা পেত ধানের গোলা। কালের বিবর্তনে এ অঞ্চল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ধানের গোলা। এক সময় মাঠ ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, আর গোলাভরা ধান গ্রামের সম্ভ্রান্ত কৃষকের পরিচয় বহন করত। সভ্যতার বিবর্তনে আর আধুনিক কৃষি সংরক্ষণের পদ্ধতি আবিষ্কারের ফলে হারাতে বসেছে কৃষকের ঐতিহ্যবাহী ধানের গোলা, দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামাঞ্চলের ধনী কৃষকের বাড়ির উঠানে শোভা পেতো ধান রাখার এই গোলাঘর। এখন সেটা আর চোখে পড়েনা, সেটা বর্তমানে বিলুপ্তির পথে।
বাঁশ দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি গোল আকৃতির কাঠামোই গোলা। ছোট বড় মানের ভেদে ১০০ থেকে ৩০০ মণ ধান সংরক্ষণ করা হতো এই গোলায়।
দিনাজপুর সদরের আউলিয়াপুর গ্রামের আব্দুল বারী জানান, ছোট বেলায় দেখছি আমাদের বাবার পুরাতন বাড়িতে ধান সংরক্ষণ করে রাখার জন্য ধানের গোলা। কালের বিবর্তনে এখন ধানের গোলায় ধান সংরক্ষণ করা হয় না। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এই ধান রাখার গোলা চিনবেই না। এই সব শিল্পকে ধরে না রাখতে পারলে পরবর্তী প্রজন্ম জানবে ও দেখবে কি করে?
তিনি আরো বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগকে এই সব শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
বাঁশের গোলা তৈরি মিস্ত্রি এলাহি বক্স কারিগর বলেন, আমি আশি-নব্বই দশকের দিকে গোলা তৈরির কাজ করতাম। তখন একটি গোলা তৈরি করতে খরচ হত সেই সময়কার ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা,যা এখন তৈরি করতে গেলে যা খরচ হবে প্রায় ১লক্ষ টাকার অধিক, তাছাড়া এটা তৈরি করতে সময়ও লাগে। বর্তমান আধুনিক যুগে কেউ গোলা ব্যবহার করে না, বর্তমান কৃষকেরা ধানসহ অন্যান্য ফসল সমূহ সংরক্ষণ করার জন্য চটের বস্তা,পলিথিনের বস্তা কিংবা প্লাস্টিকের ড্রাম ব্যবহার করছে।
দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল রায়হান বলেন, অনেক আগে গোলার ব্যবহার দেখেছি, কিন্তু বর্তমান জেনারেশন গোলার ব্যবহার কি ভাবে করতে হয় সেটাও জানে না অনেকেই। বর্তমান সময়ে গোলা ব্যবহার চোখে পড়ে না, তাছাড়া গোলা তৈরি করতে সময় লাগে ও ব্যয় বহুল, তাছাড়া খাদ্যশস্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কিছুটা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বস্তা ও ড্রামে কাঁচা-পাকা/পাকা ঘরের মধ্যে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে খাদ্য শস্য ভালো থাকে। সবমিলিয়ে বর্তমানে গোলার ব্যবহার আর দেখা যাচ্ছে না, গ্রাম বাংলার বাঁশের তৈরি গোলার ব্যবহার এখন বিলুপ্তির পথে।