নরসিংদীর রায়পুরায় মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে মোবাইল কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট ও সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে বালু দস্যুরা।
দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বালু খেকোরা মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আসছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে একাধিকবার জেল-জরিমানা করলেও থামানো যাচ্ছে না তাদের কার্যক্রম।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) স্থানীয় প্রশাসন ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ে মেঘনা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানার নেতৃত্বে অভিযানে ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শফিকুল ইসলাম, জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, সাংবাদিক এবং পুলিশ সদস্যরা।
মির্জাচর ইউনিয়নের ধরাভাঙ্গা গ্রামের পাশের নদীতে অভিযান চালিয়ে ৬টি ড্রেজার আটক করা হয়। এর মধ্যেই সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় চরমধুয়া ইউনিয়নের একটি ইটভাটার পাশে আরও কয়েকটি ড্রেজারের সন্ধান পাওয়া যায়। সেগুলো ধরতে প্রশাসন ও সাংবাদিকদের স্পিডবোটে ইটভাটার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় বালু খেকোরা গুলি চালায়।
গুলির ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। তবে নিরাপত্তার অভাবে প্রশাসন ড্রেজারগুলো ফেলে এসে ২ জনকে আটক করে। তাদেরকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার ইজারাদাররা রায়পুরা সীমানায় প্রবেশ করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে। বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের যুবদল নেতা হারুন এ কার্যক্রমে সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
যদিও হারুন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "আমি ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলাম। গুলির বিষয়েও কিছু জানি না।"
মোবাইল কোর্টের নেতৃত্ব প্রদানকারী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে প্রতিনিয়তই ভালো উত্তোলন হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা আজ মোবাইল কোর্টে গিয়েছি। সেখানে গিয়ে আমরা দেখতে পেলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার সীমানা পেরিয়ে রায়পুরা উপজেলার মির্জাচরে এসে অনেক গুলো চুম্বক ড্রেজার দ্বারা তারা বালু উত্তোলন করছিল। সে সময় আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করি। সেখানে আমরা একটি ড্রেজারে থাকা ২জনকে আটক করি। ইতিমধ্যে তাদের ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিতে না পারলে তাদের উপর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
তিনি বলেন, চরমধুয়া ইউনিয়নে একটি অবৈধ ইটভাটার পাশে ড্রেজার লাগিয়ে একদল বালু খেকো বালু উত্তোলন করতেছিলো। সে খবর পেয়ে সেখানে যাওয়ার পথেই তারা আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে আমাদের উপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে। সে সময় আমাদের সাথে পর্যাপ্ত সংখ্যক ফোর্স না থাকায় আমরা সেখান থেকে চলে আসি। ইতিমধ্যে তথ্য সংগ্রহ করেছি কে বা কারা এর সাথে জরিত তাদের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত মামলার ব্যবস্থা করছি। যাদেরকে সন্দেহ করেছি, আশাকরি যে তারা দ্রুত গ্রেপ্তার হবে।
এছাড়া আমরা যদি মেঘনা নদীসহ ফসলী জমি ও ঘরবাড়ি বাঁচাতে চাই তাহলে এখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক ফোর্স যেমন কোস্ট গার্ড, নৌপুলিশ সহ অন্যান্য বাহিনীর সহযোগিতা লাগবে। বিষয়টি আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাবো।