তিস্তা কমান্ড এলাকায় ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর চারা রোপণ

প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:১৫ | অনলাইন সংস্করণ

  রংপুর প্রতিনিধি

রংপুর বিভাগের ৪ জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রমত্তা তিস্তা কমান্ড এলাকায় চলতি বোরো মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজ কমান্ড এলাকার ক্যানেলগুলোতে সেচের পানি দেয়া শুরু হয়েছে । পানির প্রবাহ অব্যাহত থাকলে এবার ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)-এর সেচ প্রকল্পের খাল নীলফামারীর ডালিয়াস্থ তিস্তা ব্যারাজ থেকে শুরু হয়ে রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার ১২টি উপজেলায় বিস্তৃত। মোট সেচ খালের দৈর্ঘ্য ৭৬৬ কিলোমিটার।

বাপাউবোর নীলফামারীর ডালিয়াস্থ দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের হেড রেগুলেটরের মাধ্যমে রংপুর ও দিনাজপুর প্রধান সেচ ক্যানেল খালে পানি ছাড়া হয়।
জানা যায়, কয়েকদিন আগেও নদীতে পাঁচ হাজার কিউসেক পানির প্রবাহ থাকলেও পানির প্রবাহ আড়াই হাজার কিউসেকে নেমে আসে।  পাউবোর হাইড্রোলিক বিভাগ ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ মেপে জানিয়েছেন মঙ্গলবারের চেয়ে বুধবার পাঁচশত কিউসেক পানি বেড়ে তিস্তা নদীতে তিন হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীকে পানি কমার চেয়ে ৫০০ কিউসেক বৃদ্ধির ঘটনা বিরল। পানির এমন প্রবাহ অব্যাহত থাকলে এবার ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হবে।

বুধবার দুপুরে ডালিয়াস্থ তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উজান থেকে যে পানি আসছে তা তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লাইস গেইট বন্ধ রেখে সেচ ক্যানেলে নদীর পানি প্রবেশ করানো হচ্ছে।

এদিকে বুধবার সকাল থেকে নীলফামারীর জেলার ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী সদর, সৈয়দপুর, রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া ও দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর পর্যন্ত সেচ ক্যানেলে পানি সরবরাহ শুরু করা হয়। তিস্তা সেচ কমান্ড এলাকার সেচ খালে পানি পেয়ে কৃষকরা বোরো ধানের চারা রোপনে নেমে পড়তে দেখা যায়।

জলঢাকা উপজেলার  কাঁঠালী এলাকার কৃষক ইয়াছিল মোল্লা বলেন, সেচ প্রদান আজ থেকে শুরু হয়েছে। এখন কমান্ড এলাকার সকল কৃষক বোরোর চারা রোপনে নেমে পড়বে।  
বাপাউবো উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অমলেশ চন্দ্র রায় জানান,২০২১-২০২২ সালে ৫৩ হাজার হেক্টর  জমিতে বোরো চাষ করা হয় । গতবছর কমে হয়েছিল ৪৫ হাজার হেক্টরে । এবার ২০২৫ সালে তিস্তা সেচ প্রকল্পের রবি মৌসুমের বোরো ধান উৎপাদনে সেচ লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ হাজার হেক্টর।

তিনি প্রতিবেদককে আরো জানান, নীলফামারী জেলায় ৩৬ হাজার হেক্টরে মধ্যে জলঢাকায় সারে ৯ হাজার হেক্টর, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর, সৈয়দপুর উপজেলায় ২ হাজার হেক্টর ও ডিমলা উপজেলায় সারে ৪ হাজার হেক্টর, রংপুর জেলায় ১২ হাজার হেক্টরের মধ্যে তারাগঞ্জ উপজেলায় তিন হাজার হেক্টর, বদরগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার হেক্টর, গঙ্গাচরা উপজেলায় ৪ হাজার হেক্টর ও রংপুর সদরে ৪ হাজার হেক্টর ও দিনাজপুর জেলায় ৭ হাজার হেক্টরের মধ্যে খানসামা উপজেলায় পাঁচশত হেক্টর, পার্বতীপুর উপজেলায় ২ হাজার হেক্টর চিরির বন্দর উপজেলায় সারে চার হাজার হেক্টর। জমিতে সেচ প্রদানে বুধবার থেকে পানি সরবরাহ শুরু করা হয়েছে।

তিস্তা ভারত বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত অন্যতম একটি অভিন্ন নদী। শুষ্ক মৌসুমে পানি ভাগাভাগি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি আলোর মুখ দেখেনি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এই তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের ইস্যুটি একটি অমীমাংসিত সমস্যা। দুই দেশের সম্পর্কের আলোচনায় তিস্তা একটি বড় ইস্যু।

বাপাউবোর উত্তরাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, এই প্রকল্পটি বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ সক্ষমতার আংশিক ব্যবহার করে উত্তরাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার ১২টি উপজেলায় সেচ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। নতুন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে এর সক্ষমতা বহুলাংশে বাড়বে। তিনি জানান, ২০২৭ সালের জানুয়ারি থেকে এক লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসবে।