বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের নির্মাণকাজ দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে আবাসন সংকট ও গবেষণা কাজে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সমস্যার সুরাহা করে দ্রুত কাজ শুরুর দাবি তাদের।
এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ১০ তলাবিশিষ্ট শেখ হাসিনা হল, ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবন এবং স্বাধীনতা স্মারক।
এ প্রকল্পগুলোর নির্মাণ ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্মাণ ব্যয় ২৬ কোটি ৮৭ লাখ থেকে ৬০ কোটি ৯৯ লাখ, শেখ হাসিনা হলের বরাদ্দ ৫১ কোটি ৩৫ লাখ থেকে ১০৬ কোটি ৯৩ লাখ এবং স্বাধীনতা স্মারকের নির্মাণ ব্যয় ১ কোটি ৩০ লাখ থেকে ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পগুলোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন। তবে পরবর্তী সময়ে প্রকল্পের নকশা এবং পরামর্শক পরিবর্তনসহ নির্মাণ ব্যয় বাড়ানোর জন্য নতুন বরাদ্দের আবেদন করা হয়। এসব পরিবর্তনের পর দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং ইউজিসি নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়।
প্রকল্পের কাজ উপাচার্য ড. একেএম নূর-উন নবীর সময় দ্রুত এগোচ্ছিল। শেখ হাসিনা হল ও ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবন প্রায় পাঁচতলা পর্যন্ত নির্মিত হয়েছিল এবং স্বাধীনতা স্মারকের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছিল। তবে পরবর্তী উপাচার্য প্রফেসর ড. মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর সময় নির্মাণকাজে নকশা পরিবর্তন এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করে তিনগুণ বাড়তি বরাদ্দের আবেদন করা হয়, যা দুর্নীতির অভিযোগের জন্ম দেয়।
এ ঘটনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকল্পগুলোর তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয় এবং তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার জানান, উচ্চশিক্ষার সূতিকাগার বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। এখানে গবেষণা ও নতুন নতুন আবিষ্কার হবে, হবে মেধাবীদের মিলনমেলা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকার কারণে নির্মাণাধীন ভবনের উপকরণ যেমন রড, বাঁশ, কাঠ ইত্যাদি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং এগুলো আর পরবর্তীতে ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য ভবন না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মৌলিক কাজে আগ্রহী হচ্ছেন না।
শিক্ষকরা মনে করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পে দুর্নীতি বিশ্ববিদ্যালয়কে পিছিয়ে দিয়েছে এবং দ্রুত প্রকল্পগুলোর কাজ চালু করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী বলেন, শেখ হাসিনা হল ও ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবনের কাজ দ্রুত শুরু হবে। ইতিমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাশ হয়েছে এবং ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ভবন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তবে রিপোর্ট এখনো হাতে পায়নি।