ঢাকা ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তাড়াইলে দলবেঁধে বোরো চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষক 

তাড়াইলে দলবেঁধে বোরো চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষক 

ঘন কুয়াশা, হিমেল হাওয়া, মাঘ মাসের কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বোরো চারা রোপণে মেতে উঠেছেন কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার কৃষক।

উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের কৃষকরা দলবেঁধে বোরো ধানের চারা রোপণে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষকরা সবাই এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে জমিতে পানি দেয়া, চাষ করা, আগাছা পরিষ্কার, মই টেনে জমি সমান করা, সার দেওয়াসহ বীজতলা হতে চারা তোলার কাজে। তাড়াইল উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাটি বোরো চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় অধিকাংশ কৃষক কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় আবহাওয়া ভালো থাকায় উপজেলায় এবার বোরোর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে অনেকেই মনে করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১০ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪৯৯ হেক্টর জমিতে, কিন্তু আবাদ হয়েছে ৫০৫ হেক্টর জমিতে। গতকাল রবিবার পর্যন্ত ৬৪ শতাংশ জমিতে ধান রোপণের কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি ধান ৮১, ব্রি ধান ৮৪, ব্রি ধান ৮৮, ব্রি ধান ৮৯, ব্রি ধান ৯২ ব্রি ধান ৯৬, ব্রি ধান ১০০, ব্রি ধান ১০২, ব্রি ধান ১০৪ জাতের ধানের চারা রোপণ করা হচ্ছে।

উপজেলার তাড়াইল-সাচাইল সদর ইউনিয়নের কালনা গ্রামের কৃষক চান্দু ভুঁইয়া, হাবিবুর রহমান, ফজলুর রহমান, সহিলাটী গ্রামের কৃষক শাহাব উদ্দীন বলেন, এলাকায় শ্রমিক সংকটে বেশি মজুরি দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। দিনরাত পরিশ্রম করে নিয়মিত পরিচর্যাও করা হচ্ছে। এ ছাড়াও গতবছরের চেয়ে এবছর খরচ বেশি হচ্ছে। যদি ন্যায্য দাম না পাওয়া যায়, তাহলে বিশাল ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। একই ইউনিয়নের দড়িজাহাঙ্গীরপুর গ্রামের কৃষক সুরুজ আলী (২২ কাটা), সারোয়ার হোসেন সুমন (৩২ কাটা) ও বায়জিদ খান (৪৮ কাটা) জমিতে এবছর বোরোর আবাদ করছেন। প্রতি কাটা জমিতে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে বর্গাচাষিদের ক্ষেত্রে ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা খরচ হবে বলে জানান তারা। ভালো ফলন হলে প্রতি একরে ৭০ থেকে ৮০ মণ ধান হবে। বর্তমানে প্রতি মণ ধানের দাম ১৩শ' থেকে ১৪শ' টাকা।

বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কেউ কেউ শীত উপেক্ষা করে বীজতলা থেকে চারা তুলে জমা করছেন। আবার কেউ পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করে জমি তৈরি করছেন। আবার কোথাও কোথাও কৃষকরা তাদের তৈরিকৃত জমিতে ইরি-বোরো ধানের চারা রোপণ করছেন। কোথাও গভীর অথবা অগভীর সেচযন্ত্র দিয়ে জমিতে পানি তুলছেন। স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, শীতের তীব্রতা একটু কমে গেলেই কৃষকরা পুরো দমে নেমে যাবে মাঠে। সেই হিসেবে আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে শতভাগ জমিতে ইরি-বোরো ধানের চারা রোপণ কাজ সম্পন্ন হবে ধারণা করা যাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে তারা বোরো ধানের বাম্পার ফলন পাওয়ার আশা করছেন। বোরে চাষিরা যেন সঠিকভাবে ফসল চাষাবাদ ও পরিচর্যা করতে পারে, সে দিকে লক্ষ রেখে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে তৃণমূল পর্যায়ে কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে সার্বিক পরামর্শ দিচ্ছেন।

তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বিকাশ রায় আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, উপজেলার সকল কৃষকদের বোরো ধান চাষে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাকি জমির রোপণ কাজ শেষ হবে। রোপণ শেষ হলে পরবর্তীতে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে ফসলকে রক্ষা করার জন্য আলোক ফাঁদ ও পার্চিং পদ্ধতি স্থাপন করা হবে। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে ধান আবাদ হবে বলে আশা করেন তিনি।

বোরো,চারা রোপন,কৃষক
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত