কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর শিলখুড়ি ইউনিয়নে জেলা পরিষদের সরকারি জায়গায় পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে দখল করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিনে গিয়ে ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের পাগলারহাট বাজারের তহশীল অফিস সংলগ্ন উত্তর ছাট গোপালপুর মৌজার জেএল নং ২৬ খতিয়ান নং ২২৬ ও দাগ নং ৯৬৭ এর ০.০১ একর জমি বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বাংলা ১৪২০ সনের জন্য লিজ নেন শিলখুড়ি ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা মোশারফ হোসেন রঞ্জু।
সেই লিজের মেয়াদ ১ যুগ আগে শেষ হলেও সরকারি জায়গাটি নিজের দখলে রেখেছেন তিনি। নতুন করে লিজ না নিলেও সরকারি জমিতে তার দোকান ঘরের দেয়াল ও ভূমি অফিসের সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে একত্রিত করে আরসিসি পিলার দিয়ে অবৈধ পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে দখলে নেন মোশাররফ । যা সরকারী সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা বলে উল্লেখ করে স্থানীয় বাসিন্দারা কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উক্ত জায়গাটি তহশীল অফিসের মেইন ফটকের সাথে লাগানো এবং পাগলারহাট বাজারের একটা অংশ প্রতি হাটবারে উক্ত জায়গায় ধান,গম,ভুট্টা,ও সরিষাসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য বেচা কেনা হয়। এই জায়গাটি ব্যক্তি দখলে চলে গেলে এলাকার মানুষের অনেক দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হবে। তাই এলাকাবাসী জায়গাটির লিজ বাতিল করে দখলমুক্ত রেখে জনগণের সুবিধার্থে উন্মুক্ত রাখার দাবিতে গত ২০ নভেম্বর/২৪ ইং তারিখে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে পাকা স্থাপনার কাজটি চলমান রয়েছে। একাধিকবার এলাকাবাসী স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করলেও কোন প্রতিকার হয়নি।
স্থানীয় আবুল হোসেন, আনোয়ার হোসেন, ইমরান ও আব্দুল গফুর জানায়, মোশাররফ বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের একজন বলিষ্ঠ নেতা হওয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব আর দাপট খাটিয়ে সরকারী জায়গা দখল ও বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের উপর দমন নিপীড়ন করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের জোরালো দাবী জায়গাটি সরকারের আওতায় এনে এবং ভূমি অফিসের পাকা দেয়াল পূন:নির্মাণ করার দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন না ধরায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শিলখুড়ি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন জানান, ভূমি অফিসের পাকা বাউন্ডারী ওয়াল আমি আসার পূর্বে কিছু ভেঙ্গেছে। আমি গত ২৬ সেপ্টেম্বর/২৪ ইং যোগদানের পর কিছু ভেঙ্গেছে বাস্ততার কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়নি।
সহকারী কমিশনার (ভূমি ) তাহমিদুল ইসলাম ভূমি অফিসের পাকা বাউন্ডারী ওয়াল ভাঙার কথা স্বীকার করে জানান, সে জেলা পরিষদ হতে লিজ গ্রহণ করে ১৪২০ বাংলা সন পর্যন্ত লিজমানি পরিশোধ করেছেন। পরবর্তী সময়ে লিজ নবায়ন বা অবকাঠামো নিমার্ণের অনুমোদনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি কোন প্রকার কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। পাকা স্থাপনা ভাঙাসহ তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা পরিষদে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম ফেরদৌস জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর সরজমিনে তদন্তে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। এই বিষয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরুজুল ইসলাম জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়ে ইউএনও কে তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল । অভিযোগের সত্যতার প্রতিবেদন পেয়েছি। ডিসি স্যারকে বিষয়টি অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।