রংপুরে চালের দাম বৃদ্ধি, ভোগান্তিতে নিম্ন আয়ের মানুষ
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:৫৯ | অনলাইন সংস্করণ
আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর:
শস্যভাণ্ডার খ্যাত রংপুরে আমনের ভরা মৌসুমেও চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। গত ২৫ দিনে চালের বস্তাপ্রতি দাম ৩৫০-৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর ফলে খুচরা বাজারে চিকন চালের কেজিতে সাত-আট টাকা এবং মোটা ও মাঝারি চালের কেজিতে আট-দশ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধি নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে চরম ভোগান্তি সৃষ্টি করেছে।
রংপুরের প্রধান মোকাম সিটি বাজার ও মাহিগঞ্জে ঘুরে দেখা গেছে, ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে মোটা চাল পাইকারি পর্যায়ে ৫০ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৫২-৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইলের মতো চিকন চালের দাম ৭০ থেকে বেড়ে ৮০ টাকা, কাটারিভোগ ৭২ থেকে ৮২ টাকা, মিনিকেট ৭০ থেকে ৭৮ টাকা এবং গুটি স্বর্ণা ৫০ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, মিল পর্যায়ে চালের দাম বেড়েছে। এর প্রভাবেই খুচরা ও পাইকারিতে দাম বেড়েছে। বেশি দামে কিনতে হওয়ায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।
মিল মালিকদের দাবি, আমনের ভরা মৌসুমে ধানের দাম বাড়ায় চালের দাম বাড়িয়েছেন। বেশি দামে ধান কিনে চাল করতে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ায় প্রতি বস্তায় ২৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছেন তারা। সেটি খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা ৩৫০-৪০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। ফলে খুচরাতেও দাম বেড়েছে।
পাইকারি ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা দাম বাড়ানোর কারণ দেখালেও বাস্তবতা হলো দাম বাড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষজন। অনেকের মোটা চাল কিনতে কষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। গত রবিবার জেলার বড় দুটি পাইকারি মোকাম ও দুটি বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
চাল কিনতে বাজারে আসা সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, মিল ও আড়তগুলোতে হাজার হাজার বস্তা চাল মজুত থাকলেও দাম বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। মিল মালিক ও আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে গত ১৫ দিনে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। দাম বাড়ায় স্বল্পআয়ের মানুষজন বিশেষ করে শ্রমজীবী, কৃষিজীবী ও দিনমজুরসহ মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো ভোগান্তিতে পড়েছেন। আবার নিম্নবিত্তের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে দাম। এখন মোটা চাল কিনতেও কষ্ট হচ্ছে তাদের।
সিটি বাজার ও মাহিগঞ্জ মোকামের আড়তদাররা বলছেন, মিল মালিকরা হাজার হাজার বস্তা চাল মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে চালের দাম বাড়িয়েছেন। আবার বলছেন ধানের দাম বেড়েছে। এজন্য দাম বাড়িয়েছেন। ফলে তাদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনে বেশিতে বিক্রি করছেন আড়তদাররা।
তবে সরেজমিনে সিটি বাজার ও মাহিগঞ্জ মোকামেও কয়েক হাজার বস্তা চালের মজুত দেখা গেছে। এর মধ্যে আগের কেনা চালের দামও বাড়িয়েছেন আড়তদাররা। কেন মজুতকৃত চালের বাড়িয়েছেন, তার জবাব দেননি কেউ। এ নিয়ে কথা বলতে চাইলেও কোনও আড়তদার বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
আগে কম দামে কিনে মজুতকৃত চালের দাম কেন কেজিতে আট-দশ টাকা বাড়িয়েছেন জানতে চাইলে সাহেব আলী বলেন, ‘বড় বড় মোকামে দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
মজুত রাখা বেআইনি তারপরও কেন রাখা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের মালিকের আদেশ। এখানে আমরা কর্মচারী। আমাদের যেভাবে বলা হয়, আমরা সেভাবে করি।’
একইভাবে মাহিগঞ্জের অন্তত ৫০টি আড়তে ৩০-৪০ হাজার বস্তা আগের কেনা চাল মজুত আছে বলে জানিয়েছেন আড়তদারের দুজন ব্যবস্থাপক। তারা জানিয়েছেন, সংকট দেখিয়ে গত ২৫ দিনে আগের কেনা চাল দিয়ে কয়েক কোটি টাকা লাভ করেছেন তারা। একই কথা বলেছেন পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরাও।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, "রংপুর বিভাগে ধান ও চালের উদ্বৃত্ত উৎপাদন হয়। চলতি আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে। ফলে সংকটের কোনো কারণ নেই। এটি সিন্ডিকেটের কারসাজি। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।"