চকরিয়ায় ফসলি জমিতে পরিবেশ বিধ্বংসী তামাকের ভয়াবহ আগ্রাসন
প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:১৮ | অনলাইন সংস্করণ
চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
কক্সবাজারের চকরিয়ায় ফসলি জমিতে পরিবেশ বিধ্বংসী তামাকের ভয়াবহ আগ্রাসন শুরু হয়েছে। প্রতি বছর মৌসুমের শুরু থেকে কৃষকদের তামাক আবাদে নিরুৎসাহিত করতে মাঠ পর্যায়ের চাষিদের নিয়ে সচেতনতামূলক নানা কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও কোন উদ্যোগই কাজে আসছেনা। তামাক কোম্পানিগুলোর লোভনীয় ফাঁদে পড়ে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবছরও রেকর্ড পরিমাণ ফসলি জমিতে তামাক আবাদ করেছেন চাষিরা। ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষি জমির পাশাপাশি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের খাস জমিতেও তামাক আবাদের ভয়াবহ আগ্রাসন শুরু হয়েছে। সংরক্ষিত বনের ভেতর ও নদীর তীরে তামাক চাষের ব্যাপারে সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা বর্তমানে কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। আর এ ব্যাপারে প্রশাসনিক কোন পদক্ষেপই চোখে পড়ছেনা।
অভিযোগ উঠেছে, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ঢাকা টোব্যাকো, আবুল খায়ের টোব্যাকো ও রাঙ্গুনিয়া সমিতিসহ অসংখ্য তামাক কোম্পানি চাষীদের তামাক পোড়ানোর সরঞ্জাম সরবরাহ ও অগ্রিম টাকা দেয়ার প্রলোভনে ফেলে পরিবেশ বিধ্বংসী এ তামাক চাষে নামিয়ে দিয়েছেন। কৃষি জমিতে তামাক আবাদের ফলে চলতি মৌসুমে বোরোর আবাদ ও রবিশস্য উৎপাদনে ব্যাপক বিপর্যষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের বমু বনবিট ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের মানিকপুর বনবিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এবং মাতামুহুরী নদী তীরের বমু বিলছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, কৈয়ারবিল, বরইতলী, লক্ষ্যারচর, ফাঁসিয়াখালী, ডুলাহাজারা ও চিরিঙ্গা ইউনিয়নের অন্তত এক হাজার একর খাস জমিসহ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে অন্তত ১০ হাজার একর জমিতে তামাকের আবাদ হয়েছে। বেশিরভাগ এলাকায় কৃষকদের রোপণ করা তামাকের চারা বড় হতে শুরু করেছে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকেই শুরু হবে তামাক পোড়ানোর কাজ। এ লক্ষ্যে বনাঞ্চলের আশপাশে ও লোকালয়ে আগেভাগেই অসংখ্য তামাক চুল্লীর নির্মাণকাজও চলমান রয়েছে।
পরবর্তীতে এসব চুল্লীতে পোড়ানো হবে হাজার হাজার মন কাঠ। কাঠ দিয়ে তামাক পুড়ানোর ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, তামাক চুল্লিতে কাঠ ছাড়া তামাক পোড়ানো হলে তামাকের মান ভাল পাওয়া যায় না। তাই বেশি মূল্য পেতে এবং তামাকের মান নিশ্চিত করতেই কাঠ দিয়ে তামাক পাতা পোড়ানো হয়।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় ২২ হাজার হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। এসব জমিতে বোরো ধান, রবিশস্য, রকমারি শাক-সবজির উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া চকরিয়ায় কিছুকিছু ইউনিয়নে তামাকের আবাদ হয়েছে। তবে কি পরিমাণ জমিতে তামাক চাষ হয়েছে সে ব্যাপারে কৃষি বিভাগ অবগত নন বলে জানায় কৃষি বিভাগ।
চকরিয়া পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সাংবাদিক এম আর মাহমুদ বলেন, অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও চকরিয়ায় তামাকের ভয়াবহ আগ্রাসন শুরু হয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন বিপুল পরিমাণ ফসলি জমির পাশাপাশি মাতামুহুরী নদীর দুই তীর ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর আবাদি জমিতেও ব্যাপকহারে তামাকের আবাদ হয়েছে। পাশাপাশি এ তামাকগুলো পোড়ানোর জন্য সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় ও ব্যক্তিমালিকানাধীন সামাজিক গাছ নিধন হবে দেদারসে। এই মুহূর্তেই যদি প্রশাসনিকভাবে অভিযান চালিয়ে তা ধ্বংস করা না হয় তাহলে পরিবেশের যে বারোটা বাজবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
তিনি আরও বলেন, তামাক চাষের কারণে ফসলি জমির জমির উর্বরতা কমে যেমন যাচ্ছে, তেমনি চাষি এবং পরিবারের সদস্যসহ আশপাশের মানুষ প্রতিবছর নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাছিম হোসেন বলেন, ‘সরকারিভাবে তামাক চাষ বন্ধে এখনো পর্যন্ত কোন ধরনের দিক-নির্দেশনা নেই। এরপরেও তামাকের ভয়াবহতা অনুভব করে আমরা চেষ্টা করেছি নানা কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে তামাক চাষীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে। এক্ষেত্রে তামাক চাষীদের বেশি সচেতন হতে হবে। মূলত চাষীরা সচেতন হলে বিকল্প চাষের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়বে। অন্যথায় আবাদি জমি কমে গেলে ফসল উৎপাদন তথা নিরাপদ খাদ্য ভাণ্ডার নিশ্চিতে বড় ধরণের বিপর্যয় দেখা দিবে।