চাঁদপুর জেলা পরিষদের ৩৫ লাখ টাকার চেক লোপাটের চেষ্টা
প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:১৮ | অনলাইন সংস্করণ
চাঁদপুর প্রতিনিধি
বিগত ৫ আগস্টের পূর্বের উন্নয়নমূলক কাজের নামে ৩৫ লাখ টাকার চেক জালিয়াতি করে নেয়ার চেষ্টা করে চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন চক্র। তবে জেলা পরিষদের উচ্চমান সহকারী আবদুল কুদ্দুছ ভাট এর হস্তক্ষেপে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি চক্রটি। জেলা পরিষদের প্রশাসক এর অনুমতি ছাড়া পুরনো কিংবা নতুন কোন চেক অনুমোদন করা যাবেনা বলে কুদ্দুছ ভাট এই লোপাট কাজে বাধা প্রদান করেন। তবে বিষয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে ধামাচাপা দিয়ে এমন কোন ঘটনাই হয়নি বলে দাবী করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
মঙ্গলাবর (২১ জানুয়ারি) অফিস চলাকালীন সময়ে জেলা পরিষদের হিসাব রক্ষক মো. ইকবাল হোসেন এর টেবিলে ৩৫ লাখ টাকার উন্নয়নের ৫ চেক দেখতে পান উচ্চমান সহকারী আবদুল কুদ্দুছ ভাট। ওই চেকগুলোতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর ছিলো এবং পূর্বের তারিখে জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ওচমান গনি পাটওয়ারীর স্বাক্ষর নেয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়। ঠিক ওই সময় কুদ্দুছ ভাট বাধা প্রদান করেন।
এই বিষয়ে জেলা পরিষদের উচ্চমান সহকারী আবদুল কুদ্দুছ ভাট দাবী করে বলেন, আমি চেকগুলো দেখে বাধা প্রদান করি এবং হিসাব রক্ষক মো. ইকবাল হোসেন এর কাছে বিষয়টি জানতে পারি। ওই চেকগুলো পূর্বের তারিখ দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তখন আমি ইকবাল হোসনকে বলেছি যেহেতু জেলা প্রশাসক আছেন এবং তিনি কোন সমস্যা হলে যে কোন বিষয়ে উনার সাথে আলাপ করার জন্য। এরপর অফিস সময় শেষ হওয়ায় আমি বাড়িতে চলে আসি।
তিনি আরো বলেন, রাতে আমি বাড়িতে এসে এমন ঘটনায় ঘুমাতে পারিনি। ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে বাড়িতে আপন ভাই ও চাচার সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করি। কিভাবে ৩৫লাখ টাকার চেক আটকে দেয়া যায় পরিকল্পনা করি। সে আলোকে বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকালে অফিসে যাই এবং আমার খুব নিকটবর্তী লোকদের জেলা পরিষদের আশপাশে অবস্থান করতে বলি। তারা অবস্থান করে এবং আমি জেলা পরিষদের প্রবেশের পর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে ফোন দিয়ে খোঁজ খবর জানতে চান। এক পর্যায়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে বলেন, আমি চাইছি চেকগুলো দিয়ে কিছু করার জন্য। তবে এটি আমার ভুল হয়েছে। চেকগুলো বাতিল করা হয়েছে। এই ধরণের ভুল আর হবে না।
কুদ্দুছ ভাট বলেন, আমি এমন পরিস্থিতি দেখে অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং আমার উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায়। যে কারণে আমি ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে যাই।
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার চেক লোপাট চক্রের আরেক সদস্য উচ্চমান সহকারী মো. মুক্তার হোসেন মজুমদার। অভিযোগ রয়েছে এই ব্যাক্তি এর আগে ও পরে জেলা পরিষদের বহু অনৈতিক কাজে জড়িত। তবে তার বক্তব্য নেয়ার জন্য কথা হলে তিনি বলেন, চেক ইস্যু করার কাজ হিসাব রক্ষকের। আমি এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি না, কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেন।
জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ওসমান গণি পাটওয়ারীর স্বাক্ষর নেয়ার জন্য ৩৫ লাখ টাকার চেক ইস্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে হিসাব রক্ষক মো. ইকবাল হোসেন দাবী করেন চেক ইস্যুর কোন ঘটনা ঘটেইনি। এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেন বলে তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে যান।
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, জেলা পরিষদে এমন কোন ঘটনাই হয়নি। আগের উন্নয়ন কিংবা নতুন কাজের বিলের চেক প্রস্তুত করতে একটি নোট লাগে। পূর্বের তারিখ দিয়ে নোট ইস্যু করার কোন সুযোগ নেই। ৩৫ লাখ টাকার ৫টি চেক ইস্যুর বিষয়ে উচ্চমান সহকারী কুদ্দুছ ভাটের দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে বলা হলে তিনি ওই বক্তব্য দেখতে চান। কিন্তু তাকে সংরক্ষিত ওই বক্তব্য দেখানো হয়নি।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনকে এই বিষয়টি অবগত করা হলে তিনি বলেন এমন কোন কিছুই আমার জানা নেই। তবে পুরাতন কিংবা নতুন যেকোন চেক ইস্যু করার ক্ষেত্রে আমার স্বাক্ষর এবং অনুমোদন অবশ্যই লাগবে।