ঢাকা ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সবজি ও পেঁয়াজের বাজারে পণ্য আছে ক্রেতা নেই

সবজি ও পেঁয়াজের বাজারে পণ্য আছে ক্রেতা নেই

সামনে সাজানো শীতকালীন সবজির পসরা। গালে হাত দিয়ে চিন্তায় মগ্ন সবজি চাষী কামরুল ইসলাম। মেহেরপুর সদর উপজেলার কালিগাংনী গ্রামের চাষী কামরুল ইসলাম নিজের আবাদকৃত সবজি বাজারে বিক্রি করেন। তবে গেল কয়েক হাট এভাবেই গালে হাত দিয়ে চিন্তায় থাকতে হয় ক্রেতার আশায়। শনিবার দুপুরে গাংনীর সাপ্তাহিক হাটে কামরুলের মত অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এভাবেই বসে ছিলেন।

সবজি বিক্রেতা কামরুল ইসলাম জানান, তিনি সারা বছরই নিজের জমিতে সবজি আবাদ করে নিজেই বিক্রি করেন। এতে তার লাভ একটু বেশি হয়। এক কেজি পালং শাক বিক্রি করে ৫ টাকাও পাওয়া যাচ্ছে না। বাঁধাকপি বিক্রি করতে হচ্ছে ২-৫ টাকা কেজিতে। এই দামে সবজি বিক্রি করে ক্ষেত থেকে ফসল তোলার মজুর খরচই হচ্ছে না।

শনিবার জেলার হাটবাজারগুলোতে ১০০ টাকায় মিলছে ৫ কেজি আলু। বেগুন, টমেটো, লাউ রয়েছে ২০ টাকার মধ্যে। বাঁধাকপি ও ফুলকপি গেল সপ্তাহের মতই বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৫ টাকা কেজি এবং প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ৩০-৩৫ টাকায়।

এদিকে মেহেরপুর শহরের পাইকারি সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রচুর সবজির আমদানি। তবে প্রতিটি কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ। বর্তমানে সবজি বাজারজাত করার জন্য মজুর খরচ আর পরিবহণ খরচই উঠছে না তাদের। শীতকালকে সামনে রেখে মেহেরপুরের চাষিরা প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে থাকে।

পাইকারি বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসার সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের কৃষক কফিল উদ্দিন, আব্দুল খালেক, জাহাতাব, নাসির উদ্দিন সহ আরও কয়েকজন বলেন, এবার হাতে গোনা কিছু কৃষক অগ্রীম সবজি চাষ করে লাভর মুখ দেখেছে। তবে বেশির ভাগ চাষিকে প্রায় প্রতিটি সবজিতে লোকসান গুণতে হচ্ছে। শনিবার পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি শিম ১০ টাকা, পেঁয়াজ ২০ থেকে ৩০ টাকা, টমেটো ১০ থেকে ২০ টাকা, বেগুন ১০ থেকে ২০ টাকা, পালং শাক এককেজির আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা, আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা, লাউ প্রতি পিচ ১৫ টাকা, পাতা কপি প্রতি পিচ ৫ থেকে ৮ টাকা, ফুল কপি প্রতি কেজি ৬ থেকে ১০ টাকা, পেঁয়াজ কলি প্রতি কেজি ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতারা কেনার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলেও বাজারে অবশিষ্ট থেকে যাচ্ছে শীতের শাকসবজি। প্রতিদিন যে পরিমাণ সবজি আমদানি হচ্ছে সে তুলনায় ক্রেতার চাহিদা অনেক কম। ফলে কৃষকের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও লোকসানের মুখে পড়েছে। তবে ক্রেতাদের মনে স্বস্তি দেখা দিলেও সারা বছর নিয়ন্ত্রিত দর নিশ্চিত করার দাবি তাদের।

সবজি ক্রেতা জিল্লুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগেও আমরা সামান্য পরিমাণ পেঁয়াজ, আলু ও সবজি কিনেছি। এখন কিনছি ব্যাগ ভরে। তবে বাজারে প্রচুর আমদানি, তাই প্রচুর কেনার পরেও সংকট হচ্ছে না। তবে চাষির লোকসানের কথা চিন্তা করে ক্রেতা হিসেবেও আমরা স্বস্তি পাচ্ছি না। শীতে কম মূল্য এবং অন্য সময় চড়া মূল্য থাকে। এই ব্যবস্থাপনা আমরা চায় না। আমরা চায় সব সময় বাজারটা একটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকুক। যাতে কৃষকও বাঁচবে এবং ক্রেতাদেরও ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে।

সবজি বিক্রেতা আমিরুল ইসলাম ও হালিম হোসেন জানান, পাইকারি বাজার থেকে কম দামেই পাওয়া যাচ্ছে আলু এবং সবজি। তবে হাটে বিপুল পরিমাণ আমদানি থাকায় ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, আমদানির উপর কাঁচা সবজির দর নির্ভর করে। এবার একসাথে সারা দেশেই বিপুল পরিমাণ সবজি উঠেছে। তাই দর এত নিচে নেমেছে। লোকসান এড়াতে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সবজির আবাদ করার জন্য চাষীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

পণ্য,ক্রেতা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত