উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীতের প্রকোপে বিপর্যস্ত জনজীবন। ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসের কারণে শিশুরা বেশি ভুগছে ঠান্ডাজনিত নানা রোগে। রংপুর অঞ্চলে ঠান্ডার প্রভাবে শিশুদের মধ্যে কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-জ্বরসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, আজ শনিবার সকালে রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি, নীলফামারিতে ১১ ডিগ্রি এবং দিনাজপুরেও ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে আরও তিন-চার দিন।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘ঘন কুয়াশা ও বাতাসের আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণে উত্তরের জেলাগুলোতে মধ্যরাত থেকে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশা বেড়েছে। এছাড়া, দিনের বেশির ভাগ সময় সূর্যের দেখা মিলছে না।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-জ্বরের কারণে শতাধিক শিশু বর্তমানে ভর্তি রয়েছে। বহির্বিভাগেও অন্যান্য দিনের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি।
একজন অভিভাবক রহিমা বেগম জানান, তার শিশুটি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলেও বর্তমানে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থতার পথে। শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও শিশু রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত কয়েক দিনে ৫০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত। বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও একই পরিস্থিতি দেখা গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাসার বলেন, “শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য স্যালাইন, নেবুলাইজার এবং ওষুধ মজুত রাখা হয়েছে। বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি জটিল রোগীদের মেডিক্যালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
রমেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের রেজিস্টার ডা. আ ন ম তানভীর চৌধুরী জানান, “কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেশি। অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে। শিশুদের সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, গরম পানি খাওয়ানো এবং পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরানো জরুরি।”
রংপুর সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী বলেন, “শীতজনিত রোগের ঝুঁকি থেকে শিশুদের রক্ষা করতে গরম কাপড় ব্যবহার এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে দেরি না করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।”
রংপুরের জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল জানান, শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত রংপুরের ৮ উপজেলায় ৫ হাজারেরও বেশি শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে এবং এই কার্যক্রম চলমান থাকবে।
রমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান বলেন, “চিকিৎসক সংকট থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিন গড়ে ১৯০০ থেকে ২ হাজার রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালগুলোর সেবার মান উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “এ সময় আগুন পোহানোর অসতর্কতায় পোড়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জনগণের প্রতি আহ্বান, শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড় পরিধান করুন এবং আগুন পোহানোর সময় সতর্ক থাকুন বা এড়িয়ে চলুন।”
আবা/সজল