ঢাকা ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি-সম্পাদকসহ ১৯ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, উত্তেজনা

রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি-সম্পাদকসহ ১৯ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, উত্তেজনা

রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৯ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সমাজসেবা অধিদপ্তরের দায়ের করা মামলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা, বিক্ষোভ এবং তীব্র সমালোচনার মধ্যে দিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সাংবাদিক মহল। নাগরিক সমাজ এবং রাজনীতিবিদরা মামলাটি দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

জানা যায়, পায়রা চত্ত্বরে একটি ভবনে ১৯৬৫ সালে রংপুর প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর সড়ক প্রশস্তকরণে সরকার সেই ভবন প্রেসক্লাবের জমিটি অধিগ্রহণ করে তার বদলে জাহাজ কোম্পানীর সামনে স্টেশন রোডে জমি বরাদ্দ দেয়। পরবর্তীতে সাংবাদিকরা ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নামমাত্র মূল্য দিয়ে ওই জমিটি ক্রয় করে প্রেসক্লাবের নামে রেজিস্ট্রিসহ নিজস্ব অর্থায়নে ভবন গড়ে তোলে। ১৯৯১ সালে প্রেসক্লাবের তৎকালীন কমিটি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নেয়। এরপর থেকে সমাজসেবা কর্তৃপক্ষ প্রেসক্লাবকে কমিটি নবায়ন করতে কোন চিঠি দেয়নি। গত বছর সাবেক সভাপতির অনিয়ম ও দূর্নীতিসহ লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায় এবং তাকে ক্লাবের সদস্য পদ থেকে বহিস্কার করা হয়।

বিগত সরকার পতনের পর সম্প্রতি কতিপয় নামধারী সাংবাদিকদের নিয়ে ক্লাব বহিস্কৃত সদস্য বৈষম্য বিরোধী সাংবাদিক আন্দোলনের নামে প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে সমাজসেবার কাছে অভিযোগ করে এবং ভূয়া একটি কমিটি করে সমাজসেবায় দাখিল করে। সেই সাথে সমাজসেবাকে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে অবৈধ হস্তক্ষেপের জন্য চাপ দেয়। সমাজসেবা এ বিষয়ে প্রেসক্লাবের কাছে প্রায় ৩২ বছর ধরে রেজিস্ট্রেশন নবায়ন না করার অভিযোগ তুলে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। এর প্রেক্ষিতে সমাজসেবার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ। সেই মামলা থাকাকালীন হঠাৎ করে ১৫ জানুয়ারী সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত এক আদেশে প্রেসক্লাব পরিচালনার জন্য ৪ সদস্য বিশিষ্ট তত্ত্বাবধায়ক মন্ডলী নিয়োগ করে। এ আদেশের বিপক্ষে ন্যায্য বিচার চেয়ে প্রেসক্লাব পূনরায় সমাজসেবার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে আদালতের বিচারক সমাজসেবা কর্মকর্তাদের কাছে তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগে কেন চিঠি দেওয়া হলো এ বিষয়ে ৩০ দিনের মধ্যে স্বশরীরে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। এরপর অন্যান্য দিনের মত ২২ জানুয়ারী ক্লাব খুলে সকল সাংবাদিক ক্লাবে প্রবেশ করে। এ ঘটনায় ওই রাতে ক্লাবের বহিস্কৃত সদস্য ও কুচক্রী মহলের ইন্ধনে শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বাদী হয়ে মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায় প্রেসক্লাবের সভাপতি মোনাব্বর হোসেন মনা, সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলীসহ ১৯ সাংবাদিক এবং অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করে মামলা করে।

প্রবীণ সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বলেন, “সমাজসেবা অধিদপ্তর দীর্ঘদিন আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। হঠাৎ করে এমন হস্তক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য। নিবন্ধন নবায়ন না করলে তারা ফি গ্রহণ করতে পারে বা নিবন্ধন বাতিল করতে পারে, কিন্তু প্রেসক্লাব পরিচালনায় তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ দেওয়ার কোনো অধিকার নেই।”

প্রেসক্লাবের সভাপতি মোনাব্বর হোসেন বলেন, “প্রেসক্লাব সবসময় দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকেছে। কিন্তু কিছু কুচক্রী মহল এবং বিতর্কিত সাংবাদিক সমাজসেবা অধিদপ্তরকে ব্যবহার করে প্রেসক্লাবের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চাইছে।”

রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেছেন, “আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। যেহেতু এটি সমাজসেবার অধীনে, তাই ওপর মহলের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে।”

সমালোচনা,মামলা,রংপুর প্রেসক্লাব
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত