শেরপুরের নকলা উপজেলার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ হোয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জার অ্যাপে হ্যাকারের কবলে পড়ার ঘটনায় চরম বিড়ম্বনার মুখোমুখি হয়েছেন। শনিবার পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী নাদিম এবং ছত্রকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম।
জানা গেছে, হ্যাকাররা বিভিন্ন প্রতারণার কৌশল অবলম্বন করছে। হ্যাকার চক্র টেলিকম দপ্তরের নাম নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের কল করছে। বলা হচ্ছে ‘টেলিকম দপ্তর থেকে কলটি করা হয়েছে। আপনার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ হয়ে যাবে। কিংবা আপনার মোবাইল নম্বরটি বেআইনি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে!’ এমন দাবি করে আলাপচারিতা বাড়ানো হচ্ছে এবং একে একে সব তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। হ্যাকাররা চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ী ও নারীদেরকে টার্গেট করে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন হোয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জার ব্যবহারকারীরা।
হ্যাকারের কবলে পড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েক জন জানান, তাদেরকে ভিডিও কল দিয়ে কৌশলে আইডি হ্যাক করে বা কিছু ভিডিও নিয়ে সুপার এডিটের মাধ্যমে নগ্ন ভিডিও তৈরী করে। পরে প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জারে দেওয়া হয়। অতপর এডিট করা ভিডিওটি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করা হয়। মানসম্মানের ভয়ে অনেকে চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। হ্যাকারদের বিরোদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিলে এডিট করা নগ্ন ভিডিওটি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও ভুক্তভোগী অনেকে জানান।
এছাড়া মেটা অধীনস্থ ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপগুলোতে জালিয়াতির নতুন কৌশল ‘স্ক্রিন শেয়ারিং’। ভুয়া বার্তা পাঠানোর পাশাপাশি কল করে প্রতারণার সঙ্গে ‘স্ক্রিন শেয়ারিং’ করে প্রতারকরা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর ফোন অথবা কম্পিউটার থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করছে। হাতিয়ে নিচ্ছে নগদ অর্থ। প্রতারণার নতুন এ কৌশলের নাম ‘হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্রিন শেয়ারিং স্ক্যাম’। এ প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো পরিচিত বা অপরিচিত যে কারোর সঙ্গেই ভিডিও কলে কথা বলার সময় কোনো অবস্থাতেই ‘স্ক্রিন শেয়ারিং’অপশনটি চালু রাখা যাবেনা।
এক্ষত্রে প্রতারকরা প্রথমে ভিডিও কল দিচ্ছে। এরপর এমন সব কথা বলে যাতে ব্যবহারকারীদের মনে কৌতুহল জাগে। মূলত প্রতারকরা ভিডিও কলে কিছুক্ষণের জন্য রাখতে এমন করে। এরপর হোয়াটসঅ্যাপের নতুন ফিচার ‘স্ক্রিন শেয়ারিং’টি চালু করতে বলা হয়। এ ফন্দি সফল হলেই প্রতারকচক্রের কাছে সব তথ্য চলে যায়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাঠানো ওটিপি এবং পাসওয়ার্ড হ্যাক করতে পারে তারা।
এবিষয়ে আইটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখলেই বিপদ এড়িয়ে চলা সম্ভব। যেমন, অচেনা নম্বর যা নিজের ফোনে সেভ নেই এমন নম্বর থেকে বা বিদেশী কোডে হোয়াটসঅ্যাপে কল এলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বিদেশী কোডের নম্বর থেকে কল আসলে তা রিসিভ না করাই উত্তম। ফোন দেওয়া লোকের পরিচয় ভালোভাবে নিশ্চিত না হয়ে নিজের ব্যক্তিগত কোনো তথ্য না দেওয়া বা কোন ওটিপি না দেওয়া বা কোন কোড দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশেষ করে এনআইডি নম্বর, জন্ম তারিখ, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ও অন্যকোন ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক থাকতে হবে। এটিএম কিংবা ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে পিন নম্বর একান্ত নিজের, তাই এসব তথ্য কোনো অবস্থাতেই দেওয়া যাবেনা। লটারিতে টাকা-পয়সা জেতার প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে প্রতারকরা। তারা ক্রমাগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কিংবা পরিচয়পত্রের নম্বরের জন্য চাপ দিতে থাকে। এক্ষেত্রে নিজের জায়গায় নির্লোভ থাকতে হবে। এছাড়া বিদেশ থেকে বিশেষ করে ভারতী কোড +৯১ ও পাকিস্থানী কোড +৯২ এমন কিছু কোডের মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করা হয়। যা মূলত হ্যাকারদের কাজ। তারা ফোনদিয়ে বিভিন্ন কৌশলে হ্যাক করে থাকে। তাই বাংলাদেশের মোবাইল কোড +৮৮ এর বাহিরে অপরিচিত বা নিজের মোবাইলে সেভ করা ছাড়া বিদেশী ফোন নম্বর থেকে ফোন রিসিভ না করাই উত্তম।
বিডি আইটি জোনের স্বত্বাধিকারী ইফতেখার হোসেন পাপ্পু বলেন, "বিদেশি নম্বর থেকে আসা কল এড়িয়ে চলুন এবং সন্দেহজনক কোনো তথ্য শেয়ার করবেন না। নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে সতর্ক থাকা জরুরি।"