ঢাকা শুক্রবার, ০৭ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টেকনাফ সীমান্তে বাণিজ্য স্থবির, মাদক প্রবাহ অব্যাহত

টেকনাফ সীমান্তে বাণিজ্য স্থবির, মাদক প্রবাহ অব্যাহত

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের মাঝেও সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে মাদকের চালান। অন্যদিকে সংঘাতের কারনে স্থবির হয়ে পড়েছে টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। আরাকান আর্মি মংডু শহর এলাকা দখল করার পর মিয়ানমার থেকে পণ্যবাহী ট্রলারগুলো টেকনাফ বন্দরে পৌঁছাতে পারছে না। গতকাল শনিবার ১৬ দিন পর কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে আটক পণ্যবাহী একটি কার্গো বোট ছেড়ে দিয়েছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। বেলা পৌনে ১টায় পণ্যবাহী বোটটি টেকনাফ স্থলবন্দর ঘাটে এসে পৌঁছেছে। এর আগে ২০ জানুয়ারি আরাকান আর্মির হেফাজতে থাকা দুটি কার্গো বোট টেকনাফ স্থলবন্দরের পৌঁছেছিল।

পণ্যবাহী বোট ঘাটে পৌঁছার তথ্য নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ স্থলবন্দর ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্টের ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, এর আগে দুটি পণ্যবাহী কার্গো বোট আরাকান আর্মির হেফাজত থেকে মুক্তি পেয়েছিল। এই বোটগুলো মালামাল খালাস করে ইয়াংগুনে ফিরে গেছে।

তিনি বলেন, ‌‘১৬ দিন পর আরাকান আর্মির হাতে আটক বোটটিও ছাড়া পেয়েছি। সেটি ঘাটে নৌঙরে আছে। আমাদের কার্যক্রম শেষে, মালামাল খালাস করা হবে।’ এর আগে ১৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে মিয়ানমারের ইয়াংগুন থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে নাফ নদের মোহনায় আটক করা হয় পণ্যবাহী তিনটি কার্গো। এসব কার্গোতে ৫০ হাজার বস্তা শুঁটকি, সুপারি, কপিসহ বিভিন্ন মালামাল রয়েছে। এর মধ্য গত ২০ জানুয়ারি দুটি বোট ছেড়ে দিয়েছিল আরাকান আর্মি। সেখানে ২৭ হাজার ৭২২ বস্তা মালামাল ছিল।

এ বিষয়ে টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, ‘১৬ দিন পর আটকে থাকা পণ্যবাহী কার্গো বোট ছেড়ে আরাকান আর্মি। বোটটি ঘাটে পৌঁছেছে। ফলে ব্যবসায়ীদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। তবে এসব পণ্যবাহী বোট আটকে রাখার পর ইয়াংগুন থেকে কোনো পণ্যবাহী বোট আসেনি।’

স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘দেড় মাস পর ১৬ জানুয়ারি শনিবার ইয়াংগুন থেকে কয়েকজন ব্যবসায়ীর পণ্যবাহী কার্গো বোট টেকনাফ স্থলবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় নাফ নদের মোহনায় সে দেশের জলসীমানার নাক্ষ্যংদিয়া এলাকায় তল্লাশির নামে পণ্যবাহী তিনটি বোট আটকে দিয়েছিল আরাকান আর্মি। এর মধ্যে আচার, শুঁটকি, সুপারি, কপিসহ ৫০ হাজারের বেশি বস্তা পণ্য রয়েছে। এসব পণ্য স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী শওকত আলী, ওমর ফারুক, মো. আয়াছ, এম এ হাসেম, মো. ওমর ওয়াহিদ, আবদুর শুক্কুর সাদ্দামসহ অনেকের। সর্বশেষ সোমবার সকালে সাতুরু এবং এমবি হারিকিউ লেছ নামে দুটি পণ্যবাহী বোট ফেরত আসলেও একটি কার্গো বোট আরাকান আর্মি হেফাজতে ছিল। সেটিও শনিবার ছেড়ে দিছে। এই বোটে ৩০ হাজারের বেশি বস্তা মালামাল রয়েছে।

এ বিষয়ে আমদানিকারক মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘আরাকান আর্মির হাত থেকে ১৬ দিন পর পণ্যবাহী কার্গো বোট ঘাটে পৌঁছেছে। সেখানে আমাদের ১৬ শ’ বস্তা শুঁটকি রয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ৬৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা; অথচ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এই আয় ছিল প্রায় ২৫১ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে যেখানে ৩ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হতো, বর্তমানে তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের কাঠ, হিমায়িত মাছ, শুকনা সুপারি, আদা, শুঁটকি, কসমেটিক্স, নারকেল, আচার প্রভৃতি পণ্য আমদানি করা হয়। আর বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে যায় আলু, প্লাস্টিক পণ্য, তৈরি পোশাক, বিস্কুট, চানাচুর, চিপস ও কোমল পানীয়।

টেকনাফ স্থলবন্দর সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে দুই দেশের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রলার ও জাহাজ চলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি কার্যক্রম পুরোপুরি থেমে আছে। মিয়ানমারের মংডু বন্দরের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি—দুটিই বন্ধ। তবে মাঝেমধ্যে আকিয়াব ও ইয়াঙ্গুন থেকে থেমে থেমে পণ্য আমদানি হচ্ছে অল্প পরিসরে। এতে ব্যবসায়ীরা কঠিন সংকটে পড়েছেন।

টেকনাফ স্থলবন্দর সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে ২ লাখ ২ হাজার ৭৪২ টন পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছিল। এর মধ্যে আমদানি পণ্য ছিল ১ লাখ ৯৯ হাজার ২১৯ টন এবং রপ্তানি পণ্য মাত্র ৩ হাজার ৫২৩ টন। পরবর্তী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হ্যান্ডলিং নেমে আসে ৭৯ হাজার ৬৬৬ টনে। এর মধ্যে আমদানি হয় ৭৮ হাজার ৫৫৭ টন এবং রপ্তানি ১ হাজার ৪০৯ টন। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ আরও কমেছে। অর্থবছরের জুলাই, আগস্ট, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি। জুলাই মাসে আমদানি হয় ১২ হাজার ৫২৯ টন, আগস্টে ২ হাজার ২৭৩, সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ৬৪৭, অক্টোবরে ১ হাজার ১৬৬, নভেম্বরে ২ হাজার ২৯৬ টন এবং ডিসেম্বরে আমদানি হয় ৩ হাজার ৭২৪ টন ও রপ্তানি হয় মাত্র ৬৩৭ টন পণ্য।

গত শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে টেকনাফ স্থল বন্দরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা বন্দরের পরিবেশ। দায়িত্বশীল কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী ও বন্দরের সুপারভাইজার প্রধান ফটকের সামনে অলস সময় পার করছেন।

সুপারভাইজার মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, মিয়ানমার সংঘাতের কারণে আগের চেয়ে পণ্য আনা-নেওয়া কমে গেছে। তবে কয়েকদিন পর পর যে পণ্যগুলো আসছে তা ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। বর্তমানে বন্দরে কিছু আটা ও কসমেটিকস পণ্য রয়েছে। সেগুলোও শিগগিরই চলে যাবে।

জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে সীমান্ত বাণিজ্য চালু হলেও এখনো আমদানি-রপ্তানিতে ঋণপত্র বা এলসি প্রথা চালু হয়নি। মূলত ফরেন ডিমান্ড ড্রাফটের (এফডিডি) মাধ্যমে সীমান্ত বাণিজ্য চলছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও সংকট দেখা দেওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এফডিডির সংকটে পড়েন। এর মধ্যে প্রতিবেশী দেশটিতে যুদ্ধের কারণে দেশের ব্যবসায়ীরা নতুন করে সংকটে পড়েছেন।

কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাইয়ে টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া আগস্টে প্রায় ২৫ কোটি, সেপ্টেম্বরে সোয়া ৯ কোটি, অক্টোবরে প্রায় ৭ কোটি ও নভেম্বরে সোয়া ১৬ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছিল যথাক্রমে প্রায় ৪০, ৪৯, ৪৮, ৬৬ ও ৪৮ কোটি টাকা।

টেকনাফ স্থলবন্দর ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্টের ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, আগে মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫টি পণ্যবাহী কার্গো ট্রলার ও জাহাজ বাংলাদেশে আসত। সেই সংখ্যা কমে এখন সপ্তাহে এক থেকে দুটিতে নেমেছে। একইভাবে আগে বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টি কার্গো ট্রলারে মিয়ানমারে পণ্য যেত। সেখানে ১০ মাস ধরে পণ্যবাহী কোনো ট্রলার মিয়ানমারে যাচ্ছে না।

মিয়ানমারের সিদ্ধান্তে টেকনাফ স্থলবন্দরের সীমান্ত বাণিজ্য সাময়িকভাবে বন্ধ:

মিয়ানমার সরকার সাময়িকভাবে ইয়াংগুন থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরের সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছে। জানা গেছে, দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি পণ্যবাহী কার্গো বোট আটকে দেওয়ায় জান্তা সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে গত ১৬ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দুপুরে মিয়ানমারের ইয়াংগুন থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে বাংলাদেশ-মিয়ানমার নাফ নদের জলসীমা নাইক্ষ্যংদিয়ায় তল্লাশির কথা বলে পণ্যবাহী তিনটি বোট আটকে দেয় আরাকান আর্মি। পরে চার দিন পর গত সোমবার পণ্যবাহী দুটি কার্গো বোট ছেড়ে দেয়। এবং গতকাল শনিবার পণ্যবাহী একটি কার্গো বোট ১৬ দিন পর ছেড়ে দিয়েছে আরাকান আর্মি।

টেকনাফ স্থলবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা বি এম আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে টেকনাফ বন্দরের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে রাজস্ব আয়ে বড় ধস নেমেছে। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাত শুরু হয়।

কারাগার থেকেই মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করছেন সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি:

সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি কারাগারে থাকলেও মাদককারবারের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার গড়া শক্তিশালী সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয় রয়েছে এবং তার নির্দেশে মাদক পাচার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

উখিয়া-টেকনাফ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে মাদক চোরাচালানের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কথিত আছে, তার ইশারায় মিয়ানমার থেকে ইয়াবা-আইস আসে দেশে। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ১০ দিনের মাথায় তিনি গ্রেপ্তার হন, তার ভাইয়েরাও আত্মগোপনে চলে যান। তবু মাদকের চালান আসা বন্ধ হয়নি।

সূত্রমতে, কারাগারে বসেই তিনি তার বিশ্বস্ত সহযোগীদের মাধ্যমে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের চোরাচালান তদারকি করছেন। তার দীর্ঘদিনের গড়ে তোলা নেটওয়ার্ক এখনো শক্তিশালী অবস্থানে থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যেও সীমান্ত দিয়ে মাদক প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর নজরদারির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

টেকনাফ মডেল থানার তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৪ লাখের বেশি ইয়াবা ও প্রায় ৫ কেজি আইস উদ্ধার হয়েছে। এ সময়ে ১৭১টি মামলায় ২২৭ জন গ্রেপ্তার হন। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ জানান, মাদক সীমান্ত দিয়ে আসে, যা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সীমান্তরক্ষী বাহিনীর।

স্থানীয়দের মতে, আগে মিয়ানমার সীমান্ত জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এখন আরাকান আর্মির দখলে। যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেও মাদক পাচার অব্যাহত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, মাছ ধরার ট্রলারের বদলে এখন পণ্যবাহী নৌযানে ইয়াবা পাচার বাড়ছে। ৩ জানুয়ারি শাহপরীর দ্বীপের এক নৌঘাটে তেলের গ্যালন থেকে ১ লাখ ইয়াবা জব্দ করে র‍্যাব।

২০১৮ সালের মে মাসে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযানে টেকনাফে ব্যাপক ধরপাকড় ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে ২৯৯ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ১৭৪ জনই টেকনাফের। ২০১৮ সালে স্থানীয় কাউন্সিলর একরামুল হকের মৃত্যুর ঘটনায় এ অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ২০২০ সালে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের পর বন্দুকযুদ্ধ কমে আসে। ২০২১ সালে র‍্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর থেকে এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ রয়েছে।

কক্সবাজার সীমান্তে বিজিবির অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার:

কক্সবাজার রিজিয়নের আওতাধীন সীমান্ত এলাকায় ডিসেম্বর ২০২৪ মাসে বিজিবির অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানে ২ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৮ পিস ইয়াবা, ১২৬ লিটার বাংলা মদ ও ৪৮ বোতল ফেন্সিডিল জব্দ করা হয়।

এ সময় মাদক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অভিযোগে ৫৯ জনকে আটক করা হয়েছে এবং ৫১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া, অভিযানে একটি রকেট লঞ্চারের গোলা, একটি গ্রেনেড, তিন রাউন্ড তাজা গুলি ও তিনটি খালি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়। তবে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি বিজিবি। অভিযানে কোনো অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধার বা অপহরণকারী আটকের তথ্য পাওয়া যায়নি। বিজিবির এই অভিযানে সীমান্ত এলাকায় মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

বিজিবি-২ অধিনায়ক আশিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের মাদকবিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। নিয়মিত ইয়াবার চালান ধরা পড়ছে। তিনি আরও বলেন, ‘মাদক রোধসহ সীমান্তে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি খুব শক্ত অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গার পাশাপাশি কোন মাদক ঢুকতে না পারে, সেজন্য বিজিবি রাত-দিন টহল অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া সীমান্তে সম্পূর্ণরূপে অপরাধ রোধে স্থানীয়দের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে ইয়াবার সবচেয়ে বড় চালান আসে শান রাজ্য থেকে। ইয়াবার পাশাপাশি ওই রাজ্যে একরকম বিনা বাধায় উৎপাদিত হচ্ছে ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ (আইস) ও হেরোইন। এতদিন বাংলাদেশে আইসের মতো মাদকের বিস্তৃতি না থাকলেও সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রায়ই জব্দ হচ্ছে সিনথেটিক এই মাদকের চালান।

সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বরে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে ৫ কোটি টাকা মূল্যের ১ কেজি আইস জব্দ করেছে কোস্টগার্ড। তার আগে আগস্টে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অভিযানে টেকনাফ ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত থেকে ২১ কোটি টাকা মূল্যের আইস ও ইয়াবার বড় চালান জব্দ হয়।

মাদক প্রবাহ,বাণিজ্য,স্থবির
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত