ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মিন্টুর পাতিহাঁস বাঁশির সুরে চলে মাইলের পর মাইল

মিন্টুর পাতিহাঁস বাঁশির সুরে চলে মাইলের পর মাইল

বাঁশির সুরের প্রতি মানুষের ভালবাসা ভালোলাগা চিরন্তর,চিরকাল। যুগ যুগ ধরে মানুষ বাঁশির সুরের প্রতি বিমোহিত হয়ে আকৃষ্ট হয় প্রাণীকুল। এবার সেই বাঁশির সুর মানুষকে ছাপিয়ে অবলা প্রাণীকে আকৃষ্ট করাতে সক্ষম হয়েছে সাতক্ষীরা কলারোয়া উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের আরিজুল সরদারের ছেলে ওসমান গনি মিন্টু। তিনি সাতক্ষীরার এক সফল পাতিহাঁসের খামারী।

ওসমান গনি মিন্টু বলেন, একদিন হঠাৎ মন খারাপ হলে মাঠে বসে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন তিনি। তখন দেখেন হাঁসগুলো উতাল হয়ে উঠে তার কাছে আসছে। এ বিষয়টি থেকেই তিনি ভেবেছিলেন হাঁসগুলোকে বাঁশির সুর শোনানোর অভ্যাস করাবেন।

বাঁশির সুর বাজিয়ে তার খামারের শত শত পাতিহাঁসকে আকৃষ্ট করে নিয়ে যাচ্ছেন মাইলের পর মাইল পথ ধরে। তার পেছনে ছুটে বেড়ানো পাতিহাঁস দলের এমন অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখে রীতিমতো অবাক করেছে স্থানীয়রাও।

সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী কলারোয়া উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, পৃথিবীর বিখ্যাত ‘হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালার’ গল্পের মতো পাতিহাঁসের দল সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে সাতক্ষীরায় সারা ফেলেছেন ওসমান গনি মিন্টু। বাঁশির সুরে হাঁসের দল তার সাথে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

কলারোয়া উপজেলার পাতিহাঁস পালনকারী ওসমান গনি মিন্টু বলেন, দুই বছর আগে একটি গরুর খামার করেছিলেন ওসমান গনি মিন্টু। সেটিতে বড় এক প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে হতাশা গ্রস্ত হয়ে যান। পরে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শে নিজের বাড়িতে গড়ে তোলেন হাঁসের খামার। হাঁসগুলোর প্রাকৃতিক খাবারের জোগান দিতে মোবাইলে ফোনে মাধ্যমে সাউন্ড বক্সে বাশির সুর বাজিয়ে মাঠে-বিল-খানাখন্দে হেঁটে বেড়ান মিন্টু।

মিন্টু আরও বলেন, নিজের বাড়িতে গড়ে তোলেন হাঁসের খামার। হাঁসের প্রাকৃতিক খাবারের জোগান দিতে মোবাইলে ফোনের মাধ্যমে সাউন্ড বক্সের বাঁশি বাজিয়ে খালে বিলে চরিয়ে নিয়ে বেড়ান মিন্টু। আর সেই সুর শুনে তার পেছনে ঘুরে বেড়ায় পাতিহাঁসের দল।

সীমান্তের বোয়ালিয়া গ্রামে হাঁস লালন পালন করে এলাকায় ‘হাঁস মিন্টু’ নামেও পরিচিতি পেয়েছেন। তার পেছনে ছুটে বেড়ানো পাতিহাঁসের দলের এমন দৃশ্য দেখতে যাচ্ছেন উৎসুক জনতারাও। বিষয়টি রীতিমতো অবাক করেছে তাদের। নিজেকে একজন স্বাবলম্বী হিসেবে দেখতে চান।

মিন্টুর মা আহরণ নেসা বলেন, আমার ছেলে প্রথম দুই বছর আগে একটি গরুর খামার করে প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে হতাশা গ্রস্ত হয়ে পড়ে। পরে একটি হাঁসের ফার্ম তৈরি করেছেন।

তিনি আরও বলেন, প্রায় ১২০০ হাঁস আছে। সকাল হলেই হাঁসগুলোকে খামার থেকে বের করে বিভিন্ন বিলে নিয়ে যায় তিনি। বিকেল হলে বাঁশির সুরে চলা হাঁস গুলো দেখতে ভিড় করেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষ।

কলারোয়া উপজেলার সদরের সমাজ সেবক ও অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশের বেকার যুবকরা চাকরির পেছনে না ঘুরে হাঁস বা গাভী পালনের মতো বিভিন্ন কৃষি খাত নিয়ে কাজ করলে এগিয়ে যেতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, বেকার যুবকরা চাকরির পেছনে না ঘুরে মিন্টুর হাঁস পালনের পথ অনুসরণ করার কথা বলেন।

ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) বিজ্ঞানী ও আমেরিকান প্রবাসী ড. মশিউর রহমান বলেন, মিন্টুর হাঁস পালন পদ্ধতিটা খুব ভালো লেগেছে। তিনি বাঁশি বাজিয়ে আগে আগে হাঁটতে থাকেন আর তার পেছনে পেছনে হাঁসগুলো লাইন ধরে চলে।

তিনি আরও বলেন, আমি মিন্টুর সাথে তার বাঁশি বাজিয়ে হাঁস গুলো চরিয়ে বিলে নেওয়ার দৃশ্য দেখেছি এবং সাথেও চলেছি। তিনি মিন্টুর সাথে ব্যবসা করার কথা জানান,নাসার এই বিজ্ঞানী আমেরিকান প্রবাসী।

সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. এস এম মাহবুবুর রহমান বলেন, মিন্টুর কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে হাঁস লালন-পালনের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করতে পারেন। নিজেদের সমস্যা সমাধান করে তারা আত্মনির্ভরশীল হবেন আশাকরি।

তিনি আরও বলেন, হাঁস পালন অত্যন্ত যুগান্তকারী পদক্ষেপ এবং আমি মিন্টুর সাফল্য কামনা করেন।

সুর,বাঁশি,পাতিহাঁস
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত