ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মরিচের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

মরিচের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

শেরপুরের নকলা উপজেলায় মরিচের বাম্পার ফলন হওয়ায় এবং বাজারে ভালো দাম থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। স্বল্প সময়ের এবং নাম মাত্র শ্রমে অন্যান্য ফসলের চেয়ে মরিচে কয়েকগুণ লাভ পাচ্ছেন চাষিরা। উৎপাদন খরচের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি লাভ পাওয়ায় দিন দিন মসলা জাতীয় এই ফসল আবাদের দিকে ঝুঁকছেন কৃষক। এছাড়া সব এলাকার কৃষকদের মরিচ চাষে আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর নকলা উপজেলায় ৩৪৪ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল; তবে অর্জন হয়েছে ৩০১ হেক্টর। কিন্তু সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে কৃষকদের আগ্রহ ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মরিচের আবাদ বেশি হয়েছে। কৃষক ও সংশ্লিষ্টদের মতে এবছর উপজেলায় কমপক্ষে ৪০০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে মরিচ উৎপাদন ভালো হওয়ায় ও উপযুক্ত দাম থাকায় কৃষকরা খুশি। আগামীতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এই মসলা জাতীয় ফসল চাষের পরিমাণ ও মরিচ চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে জানান স্থানীয় কৃষকসহ সংশ্লিষ্ট অনেকে।

মরিচ চাষীরা জানান, এবছর পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যার পানিতে উপজেলার প্রায় সব এলাকা প্লাবিত হওয়ায় জমিতে প্রচুর পরিমাণে উর্বর পলি জমেছে। ফলে মরিচসহ সকল কৃষিপণ্যের উৎপাদন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। জমিতে পলি পড়ার কারণে একদিকে উৎপাদনে সার বাবদ ব্যয় কমেছে, অন্যদিকে উৎপাদন বেড়েছে। ফলে কৃষকরা সকল কৃষি আবাদেই আগের চেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন।

কৃষি অফিস ও মরিচ চাষী সূত্রে জানা গেছে, মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে মরিচ, আদা, রসুন, পেঁয়াজ ও হলুদ উপজেলার প্রায় সব এলাকাতে কম-বেশি আবাদ করা হয়। উপজেলার চন্দ্রকোনা, চরঅষ্টধর, পাঠাকাটা, বানেশ্বরদী, গৌড়দ্বার ও উরফা ইউনিয়নের কৃষকরা মরিচের আবাদ বেশি করেন। তবে, সবচেয়ে বেশি মরিচ আবাদ করা হয় চন্দ্রকোনা, চরঅষ্টধর, পাঠাকাটা ও উরফা ইউনিয়নে। এসব এলাকায় মরিচ বেশি চাষের কারণ হিসেবে তারা জানান, এ ইউনিয়ন গুলো ব্রহ্মপুত্র নদ, সূতীখালি নদী, ইছামতী ও ভোগাই নদী এবং বিভিন্ন দীর্ঘতম খালের তীরবর্তী হওয়ায় প্রতি বছর বন্যায় প্লাবিত হয়। এতে জমিতে প্রচুর পলি পড়ে। ফলে এসব এলাকায় মরিচের উৎপাদন বেশি হয়। তাই এখানের কৃষকরা অন্য আবাদের চেয়ে মরিচের আবাদ বেশি করেন।

ভুরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ্ব মো. ছায়েদুল হক বলেন, আমাদের কৃষক সংগঠনের প্রায় প্রতিটি কৃষক সদস্য নিজের পরিবারের চাহিদা মিটানোর জন্য অল্প করে হলেও মরিচ চাষ করেন। তবে অনেকেই বাণিজ্যিক ভাবে উন্নত জাতের মরিচের আবাদ করে আসছেন। তারা নিজেদের চাহিদা মিটানোর জন্য প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনার পতিত জমিতে মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে মরিচের পাশাপাশি আদা, রসুন, পেঁয়াজ ও হলুদের আবাদ করেন।

মরিচের পাইকারি ব্যবসায়ী চরশেরপুর এলাকার মো. চান মিয়া জানান, তার মত অনেকেই চরাঞ্চলের হাট-বাজার থেকে মরিচসহ বিভিন্ন শাক সবজি কিনে নিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে অল্প লাভে পাইকারি বিক্রি করেন। বেশি বেশি কৃষি পণ্য বেচা-কেনা করায় লাভ কম হলেও, মোট হিসেবে লাভ বেশি হয়। আর এই লাভের টাকা দিয়েই তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচসহ সংসারের সকল ব্যয় বহন করা হয়।

নকলা বাজারের সবজি বিক্রেতা রফিকুল ইসলামসহ মাঝারি ধরনের অনেক পাইকার বলেন, ‘আমাদের পুঁজি অল্প। তাই আমরা চন্দ্রকোনা, নারায়নখোলা ও চরঅষ্টধরের মতো চর এলাকার বড় বড় সবজির বাজার থেকে মরিচ, আদা, হলুদ, আলুসহ বিভিন্ন শাক-সবজি পাইকারি কিনে নিয়ে স্থানীয় বাজারে বসে খুচরা বিক্রি করি। এতে বেশি লাভ পাওয়া যায়।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী জানান, নকলার মাটি মরিচ উৎপাদনের জন্য উপযোগী। তাই উপজেলার প্রতিটি এলাকায় কম-বেশি মরিচের আবাদ করা হয়। বাম্পার ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় এবং কৃষকের আগ্রহের কারণে দিন দিন মরিচের আবাদ বাড়ছে। তিনি আরো জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় মরিচ চাষে অপেক্ষাকৃত বেশি লাভ পাওয়া যায়। নকলায় স্থানীয় জাতের পাশাপাশি উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল মরিচের আবাদ করা হয়। মসলা জাতীয় এই ফসলের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি ভাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কৃষি প্রণোদনা অথবা কৃষকদের প্রদর্শনী বরাদ্দ দেওয়া না হলেও, মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ সেবা দেওয়া হচ্ছে। ফলে মরিচ চাষের মাধ্যমে চাষীরা প্রতি বছর অন্যান্য ফসলে তুলনায় অধিক লাভ পেয়ে আসছেন। যেকেউ বাড়ির আঙ্গিনায় বা পতিত জমিতে উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল মরিচ চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী।

হাসি,কৃষক,মরিচ,বাম্পার
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত