ঢাকা মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

অযত্নে পাবনার ৪০০ বছরের পুরোনো জোড়বাংলা মন্দির

অযত্নে পাবনার ৪০০ বছরের পুরোনো জোড়বাংলা মন্দির

পাবনায় ৪০০ বছরের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ঐতিহ্যবাহী জোড়বাংলা মন্দির অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে আছে। শহরের কালাচাঁদ পাড়ায় অবস্থিত এই মন্দিরটি পাবনা জেলার তালিকাভুক্ত দর্শনীয় স্থান হওয়া সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

জানা গেছে, কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জোড়বাংলা মন্দিরটি দেশের অন্যতম প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এটি শুধু পাবনা জেলার মধ্যেই নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম জোড়া লাগানো মন্দিরগুলোর মধ্যে একটি। মন্দিরের অভ্যন্তরে কোনো শিলালিপি না থাকায় নির্মাণকাল সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে ধারণা করা হয় এটি ৪০০ বছরেরও বেশি পুরোনো। জনশ্রুতি অনুসারে, তৎকালীন মুর্শিদাবাদ নবাবের তহশিলদার ব্রজমোহন লাহোড়ী এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন।

বেদির ওপর নির্মিত মন্দিরের সামনের অংশ ৭.৩১ বাই ৭.৯২ মিটার এবং নিচের অংশ ৬.১২ বাই ২.২৮ মিটার। ৭.০১ মিটার উচ্চতার মন্দিরটি দুই কক্ষবিশিষ্ট এবং এর দুই পাশে আটটি করে মোট ১৬টি স্তম্ভ দৃশ্যমান। ইটের বেদির ওপর দৃষ্টিনন্দন পোড়ামাটির কারুকার্য সংযোজন করা হয়েছে, যা মন্দিরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো দোচালা আকৃতির ছাদ।

১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মন্দিরটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর এটি অবহেলায় পড়ে থাকে এবং ধীরে ধীরে কারুকার্য হারিয়ে যায়। ১৯৬০ সালে তৎকালীন পাবনা জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে মন্দিরের সংস্কার করা হলেও বর্তমানে তা আবারও জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মন্দির প্রাঙ্গণ ঘাস, আগাছা আর জঙ্গলে পরিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মূল ভবনের পিলার ও দেয়ালের পোড়ামাটির শিল্পকর্ম ক্ষয়ের মুখে পড়েছে, আর সীমানা প্রাচীরেও ফাটল দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বছরের বেশিরভাগ সময় মন্দিরের প্রধান প্রবেশপথ তালাবদ্ধ থাকে। দর্শনার্থীদের জন্য এটি যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন পাবনাবাসী।

পাবনার জেলা প্রশাসক মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, “এটি পাবনা জেলার অন্যতম পুরোনো ঐতিহ্যবাহী মন্দির, যার বয়স প্রায় ৪০০ বছর। এটি যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরকে জানানো হবে। পাশাপাশি দর্শনার্থীদের জন্য সুষ্ঠু পরিকাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনাও নেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, পাবনার এই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার সৌন্দর্যবর্ধন ও সংরক্ষণের জন্য প্রশাসনিকভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হবে।

জোড়বাংলা মন্দির,অযত্ন
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত