একমাত্র ছেলেকে সৌদি আরব পাঠাতে ঢাকায় গিয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারালেন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার শহীদুল ইসলাম মিরন জমাদ্দার (৬০)। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকালে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছালে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
প্রবাসী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল মিরন জমাদ্দারের একমাত্র ছেলে মুনিম জমাদ্দারের। ছেলের ফ্লাইট ছিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। ছেলেকে বিদায় জানাতে রবিবারই ঢাকায় পৌঁছান বাবা মিরন জমাদ্দার। শাহজাদপুরের মজুমদার ভিলা ভবনের চতুর্থ তলায় ‘সৌদিয়া হোটেল’-এ উঠেছিলেন তারা।
সোমবার দুপুরে ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি বিউটি পার্লারে ভয়াবহ আগুন লাগে। মুহূর্তেই ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। ধোঁয়ার কারণে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান মিরন জমাদ্দার।
নিহতের শ্যালক হিরন তালুকদার জানান, ঘটনার সময় তিনি ও মুনিম হোটেল থেকে বেরিয়ে নাস্তা আনতে গিয়েছিলেন। আগুন লাগার খবর পেয়ে তারা মিরন জমাদ্দারকে ফোন করেন বাইরে বেরিয়ে আসতে। মিরন তখন কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ‘আমি বাঁচার কোনো পথ পাচ্ছি না, চারপাশে শুধু ধোঁয়া আর ধোঁয়া, দম বন্ধ হয়ে আসছে।’ এরপরই ফোন কেটে যায়।
পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে হোটেলের ৪০২ নম্বর কক্ষ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে। আরও তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টায় মিরন জমাদ্দারসহ কয়েকজন হোটেলের ছাদে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ছাদের দরজা তালাবদ্ধ থাকায় বের হতে পারেননি তারা।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার সকালে মিরনের মরদেহ গ্রামের বাড়ি ভান্ডারিয়ার দারুলহুদা গ্রামে আনা হয়। জানাজায় অংশ নেন এলাকাবাসীসহ শত শত মানুষ।
স্থানীয় সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন বলেন, "মিরনের স্ত্রী তিন বছর আগে মারা গেছেন। একমাত্র ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে বহু কষ্ট করে টাকা জোগাড় করেছিলেন তিনি। সেই ছেলেকে বিদায় দিতে গিয়ে নিজেই লাশ হয়ে ফিরলেন। পরিবারটি এখন অসহায় হয়ে পড়েছে।"
ভান্ডারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইয়াছিন আরাফাত রানা বলেন, "এটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। পরিবারটির অসহায়ত্ব বিবেচনা করে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।"