ঢাকা ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কাইজেলিয়া এশিয়ায় রয়েছে মাত্র পাঁচটি, বাংলাদেশের দুটিই কারমাইকেলে

কাইজেলিয়া এশিয়ায় রয়েছে মাত্র পাঁচটি, বাংলাদেশের দুটিই কারমাইকেলে

উত্তরবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কারমাইকেল কলেজের ছায়া সুনিবিড় সুবিশাল ক্যাম্পাস। লালবাগ থেকে মূল গেট পেরিয়ে চুন সুরকি ও সিমেন্টের সড়কের দুই পাশে অজস্র গাছ পালার মধ্যে রয়েছে কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের বিরল প্রজাতির দুটি গাছ, যার বৈজ্ঞানিক নাম কাইজেলিয়া (Kigelia africana)। এদের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং অপরটি মসজিদের প্রধান ফটকের সামনে।

বর্তমানে গাছ দুটির উচ্চতা প্রায় ২০-২৫ মিটার। গাছটিতে কালচে লাল রং এর ফুল হয় এবং ফল গুলো হয় আকারে বড়, লম্বাটে ও গোলাকার। এর ওজন ৫ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত হয়। ফল গুলো কাঁচা অবস্থায় সবুজ রঙের এবং পাকলে বাদামি রঙের হয়। এই ফল বিষাক্ত কিন্তু ফল গুলো প্রক্রিয়াজাত করলে আলসার, সিফিলিস, সর্প দংশনের ঔষধ, বাত, ছত্রাক দমন, চর্মরোগ, মেয়েদের প্রসাধনী সামগ্রী এমনকি ক্যানসার রোগের চিকিৎসাতেও বহুল ব্যবহৃত হয়।

কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক রাশেদা খাতুন জানান, কাইজেলিয়া বৃক্ষের আদি নিবাস আফ্রিকা। সম্ভবত কলেজ প্রতিষ্ঠাকাল ১৯১৬ থেকে ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠাতাদের কেউ দুর্লভ প্রজাতির তিনটি গাছ এখানে রোপণ করেছিলেন। পরবর্তীতে একটি মরে গেলেও এখন রয়েছে দুটি। আবার কারও কারও মতে, সে সময় বড় রকমের কোন ঝড় জলোচ্ছ্বাসের মাধ্যমেও কোন চারা এখানে এসে গজিয়ে উঠতে পারে।

তিনি জানান, এ গাছের উচ্চতা হয়ে থাকে ২০ থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত। শীতের শেষে ফালগুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসে এ গাছে এক ধরনের ফুল ফোটে যার রং হয় মেরুন অথবা কালচে লাল। ফল দেখতে সুন্দর, লম্বা ও গোলাকৃতির অনেকটা মোটা বেগুনের মতো। একেকটি ফলের ওজন হয়ে থাকে ৫ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত।

কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক জানান, নব্বই এর দশকের গোঁড়ার দিকেও এই গাছ অচিন বৃক্ষ নামেই পরিচিত ছিল। কিন্তু বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির আধুনিকায়নে ৯৪-৯৫ সালে কলেজের তৎকালীন উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. মোস্তফা কামাল পাশা এ গাছ দুটির ওপর বিষদ গবেষণা চালিয়ে আবিষ্কার করেন এর আদ্যোপান্ত। পরবর্তীতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি দলও এর ওপর গবেষণা চালান। যেহেতু এ গাছের প্রজনন কিংবা বংশ বৃদ্ধির কোন সুযোগ নাই, তাই টিস্যু কালচারের মাধ্যমে এ গাছ থেকে তারা ১১টি চারা উৎপন্ন করেন এবং কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সামনে রোপণ করেন উৎপন্নকৃত দুটি শিশু চারা। আর বাকি ৯টি চারা রোপণ করা হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। মজার বিষয় হলো অপর ওই ৯টি চারা মরে গেলেও এখানকার দুটি বেড়ে উঠছে অনেকটাই। অর্থাৎ এখন এখানে প্রবীণ এবং নবীন মিলে চারটি কাইজেলিয়ার অবস্থান।

কারমাইকেল কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও ইংরেজী বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম জানান, কারমাইকেলের মাটি ও আবহাওয়া এ গাছের জন্য অনেকটাই উপযোগী।দুর্লভ ও বিরল প্রজাতির এ গাছ দেখতে বহুকাল আগে থেকেই দেশ-বিদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ছাড়াও পর্যটকদের অনেকেই এখানে আসেন এবং এর সম্পর্কে জানার চেষ্টা চালান। তারা এর ছবিও তুলে নিয়ে যান।

কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. আমজাদ হোসেন জানান- সুবিশাল ক্যাম্পাসে বিলুপ্ত প্রায় কাইজেলিয়া। বিরল প্রজাতির কাইজেলিয়া অবস্থান এশিয়ায় রয়েছে মাত্র পাঁচটি, বাংলাদেশের দুটিই কারমাইকেলে।

কারমাইকেল কলেজ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত