রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় ছিনতাইকারী চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে বাস ও ট্রাকের সিরিয়ালে আটকে থাকা যাত্রীদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ও ব্যাগ ছিনিয়ে নিচ্ছে তারা। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা সন্তোষজনক নয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয়রা জানান, শীতের কুয়াশায় রাত হলেই দৌলতদিয়া ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ সারি পড়ে। কুয়াশার কারণে মাঝেমধ্যে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে, আবার ট্রাফিক পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে যানবাহন সিরিয়ালে আটকে রাখা হয়—এমন অভিযোগ করেছেন চালকরা। এই সুযোগে ছিনতাইকারীরা গাড়ির জানালা দিয়ে মোবাইল, ব্যাগ, স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে মুহূর্তেই অন্ধকারে গা ঢাকা দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যাত্রীরা চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসে না, এমনকি চালক ও হেলপাররাও কিছু করতে সাহস পান না। ছিনতাইয়ের পর অনেকেই থানায় অভিযোগ করতে যান না, কারণ এতে সময় নষ্ট হবে এবং যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হবে।
দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ছিনতাইয়ের শিকার হন যশোর থেকে ঢাকাগামী যাত্রী ইকবাল হোসেন। তিনি জানান, আমি বাসের জানালার পাশে বসে ছিলাম। হঠাৎ করেই এক যুবক জানালা দিয়ে আমার হাত থেকে রিয়েলমি ১৩ প্রো মোবাইলটি ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় দেয়। আমি চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। আমিও খোঁজ করেও তাকে পাইনি। আমার শখের ফোনটি হারিয়ে গেল।
এছাড়া রোজিনা পরিবহনের যাত্রী আব্দুল ওয়াহাব জানান, আমি ল্যাপটপের ব্যাগ কোলে রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভাঙার পর দেখি জানালার গ্লাস খোলা, আর আমার ল্যাপটপের ব্যাগও নেই! অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস সব চলে গেলো। ফেরিতে উঠতে হবে বলে থানায় অভিযোগও করতে পারছি না।
অনেক পরিবহনের চালকেরা অভিযোগ করে বলেন, জানি না কেন, একটু কুয়াশা পড়লেই ট্রাফিক পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তারা গাড়ি আটকে দেয়। আর গাড়ির সিরিয়াল হলেই ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। পুলিশ ও কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণেই এসব হচ্ছে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, ঘাট এলাকায় ছিনতাইয়ের কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। ছিনতাই নির্মূলে পুলিশ সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে।
স্থানীয়রা ও যাত্রীরা দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন। তারা চান, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়ানো হোক এবং দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধের নামে অপ্রয়োজনীয় যানজট সৃষ্টির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হোক।