চট্টগ্রামের প্রধান দুই নদী—হালদা ও কর্ণফুলীর পানিতে উদ্বেগজনক হারে লবণাক্ততা বেড়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসা মহানগরীর জন্য এই দুই নদী থেকে প্রতিদিন ৪৬ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করে। কিন্তু বর্তমানে প্রতি লিটারে সর্বোচ্চ ২১০০ থেকে ২৩০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণাক্ততা পাওয়া যাচ্ছে, যা মানবদেহের জন্য সহনীয় মাত্রার (২৫০ মিলিগ্রাম) প্রায় সাড়ে ৮ গুণ বেশি।
চট্টগ্রাম ওয়াসার তথ্যমতে, শুক্রবার (১৪ মার্চ) প্রতি লিটারে ২১০০ মিলিগ্রাম লবণ পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ডিসেম্বরের শেষ দিক থেকে হালদা ও কর্ণফুলীর পানিতে লবণের মাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।
কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে চারটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এতে হ্রদ থেকে হালদায় পানির প্রবাহ কমে গেছে, ফলে কর্ণফুলী নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরের লবণাক্ত পানি সহজেই হালদায় প্রবেশ করছে। এতে ওয়াসার পানি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল আমিন জানান, জোয়ারের সময় কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানিতে লবণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে ওয়াসার পানি উৎপাদন কমে গেছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
ওয়াসার চারটি প্রধান প্রকল্প—মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্প, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প ১ ও ২, এবং মোহরা পানি সরবরাহ প্রকল্পে দৈনিক কয়েক ঘণ্টা করে পানি উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে দৈনিক অন্তত ৮ কোটি লিটার পানি উৎপাদন কমে যাচ্ছে, যার ফলে নগরীর কাট্টলী, পতেঙ্গা ও আশপাশের এলাকায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
এর আগে মদুনাঘাট প্রকল্প থেকে দৈনিক ৯ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করা হলেও বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ থেকে সাড়ে ৬ কোটি লিটারে। কর্ণফুলী প্রকল্প ১ ও ২ থেকে ২৮ কোটি লিটার উৎপাদনের কথা থাকলেও বর্তমানে তা ২৫ কোটিতে নেমে এসেছে। একইভাবে মোহরা প্রকল্পেও ৯ কোটি লিটারের পরিবর্তে এখন মাত্র ৬ থেকে সাড়ে ৬ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হচ্ছে।
ওয়াসার প্রকৌশলীরা বলছেন, বৃষ্টিপাত না হলে এবং কাপ্তাই হ্রদ থেকে পানির প্রবাহ না বাড়লে সংকট আরও তীব্র হতে পারে। সংকট মোকাবিলায় পানি সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে বিকল্প সমাধানের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে।