ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রামের খলিফাপট্টিতে ঈদের আমেজ

চট্টগ্রামের খলিফাপট্টিতে ঈদের আমেজ

পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে জমে উঠতে শুরু করেছে বন্দর নগরীর বিপণী বিধানগুলো। একইসাথে ব্যস্ততা বেড়েছে দর্জিদেরও। বন্দর নগরীর খলিফাপট্টিতে ৬ দশক আগে গড়ে উঠেছিল থান কাপড় ও সেলাইয়ের মার্কেট।

ছোট-বড় ৪ শতাধিক এসব দোকানে রমজানের শুরু থেকে ঈদের পোশাক তৈরিতে কারিগরদের থাকে রাত-দিনের ব্যস্ততা তবে থান কাপড়ের পাশাপাশি তৈরি পোশাকও বিক্রি হয় এসব দোকানে।

তৈরি পোশাকের মধ্যে আছে থ্রিপিস, লেহেঙ্গা, স্কার্ট, শাড়ি, পাঞ্জাবি, পায়জামা ও বিভিন্ন বয়সের বাচ্চাদের জামা। জানা যায়, খলিফাপট্টির পোশাক কারখানাগুলোর বিশেষত্ব কম মূল্যে রুচিশীল পোশাক তৈরি। মূলত ঢাকার ইসলামপুর ও চট্টগ্রামের টেরিবাজার থেকে কাপড় সংগ্রহ করে নিজস্ব ডিজাইনে তৈরি করা এসব পোশাকের বেশ কদর রয়েছে। তাই এখান থেকে চট্টগ্রাম জেলা ছাড়াও আশপাশের জেলা শহর থেকে ব্যবসায়ীরা ডিজাইন ও সেলাই করা কাপড় কিনে নেন। নূন্যতম ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকায় এখানে তৈরি হয় পোশাক।

তাই ঈদের ২-৩ মাস আগে থেকেই ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়তে থাকে এ মার্কেটে। এদিকে খলিফাপট্টিতে গিয়ে দেখা যায়, ঈদ সামনে রেখে চট্টগ্রামের খলিফাপট্টির সৈকত গার্মেন্টসে বেশি বানানো হচ্ছে পারসি নামের ভারতীয় পোশাকটি। এর বাইরে সেলোয়ার কামিজ, থ্রিপিসের কাজও আছে। তবে ক্রেতার চাপ অন্যবারের তুলনায় কম।

এ কারখানার শ্রমিক মো. নাসির বলছিলেন, অন্যবার অনেক রাত পর্যন্ত ক্রেতা থাকে। এবার সেটা দেখা যাচ্ছে না। নগরীর আন্দরকিল্লা সংলগ্ন ঘাট ফরহাদবেগে এই খলিফাপট্টিতে রয়েছে ছোট ছোট কয়েকশ কারখানা। বেশিরভাগ কারখানায় এবার ভারত-পাকিস্তানের পোশাকের আদলে নিজস্ব নকশার পোশাক তৈরি হচ্ছে। খলিফাপট্টির ক্রেতা মূলত পোশাকের দোকানের ব্যবসায়ীরা।

এখানকার তৈরি পোশাকগুলো চট্টগ্রামের বিপণি বিতান, পাহাড়ের তিন জেলা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, লহ্মীপুর, চাঁদপুর, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ছোট-বড় মার্কেট ও পোশাকের দোকানে চলে যায়।

সেলাইয়ের কাজে জড়িত দর্জিদের চট্টগ্রামে বলা হয় খলিফা। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর আইয়ুব আলী সওদাগর নামের এক দর্জিসহ কয়েকজন কলকাতা থেকে চট্টগ্রামে এসে ঘাটফরহাদবেগে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে ওই এলাকার নামই হয়ে যায় খলিফাপট্টি। কারখানা মালিক ও শ্রমিকদের ভাষ্য, সারা বছরের বড় ব্যবসাটা তাদের এই ঈদের সময়ই হয়। রোজা শুরুর আগে থেকেই শুরু হয় ব্যস্ততা। মানুষের ঈদের পোশাকের জোগান দিতে তারা কাজ করেন রাত জেগে।

সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাদের কেউ করেন সেলাই, কেউ বসান জরি-পুঁতি, আবার কেউ করেন ইস্ত্রি। আবার কিছু দোকানি বাইরে থেকে পোশাক কিনে এনেও এখানে বিক্রি করেন। খলিফাপট্টি ঘুরে দেখা গেল, প্রতিটি দোকানে ঈদের পোশাকের মজুদ বাড়ানো হয়েছে। প্রায় প্রতিটি দোকানে শোভা পাচ্ছে নতুন ডিজাইনের ‘পারসি’। জামার উপরের অংশে নানা ধরনের পুঁতির কাজ। নিচের অংশটি দেখতে পালাজ্জোর মত। সেখানেও রয়েছে কারুকাজ।

সাজিদ ফ্যাশন নামের একটি দোকানের মালিক মো. সেলিম বলেন, এখানে মূলত পাইকারি বিক্রি হয়। চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পোশাক পাইকারি দরে কিনে নিয়ে বিক্রি করেন। তার ভাষ্য, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় রোজায় বিকিকিনি ভালো হয়। তবে আগের বছরের তুলনায় এবার কম বিক্রি হচ্ছে। এবছর ভারতীয় পারসি, গোল থ্রি পিস জামার চাহিদা বেশি জানিয়ে সেলিম বলেন, এসব জামার কাপড়ও আসে ভারত থেকে। এখানে শুধু জামাগুলো তৈরি করা হয়।

১০/১৫ রমজানের পর থেকেই এখানে বিকিকিনি বাড়ে। এবছর আগের মত বিক্রি হচ্ছে না। তবে আশা করছি ১৫ রোজার পর বিক্রি বাড়বে।

আলম গার্মেন্টসের শ্রমিক মো. সাজিদ জানান, কাজের ব্যস্ততা থাকলেও আগের বছরের তুলনায় এবার কাজ কম। তার সহকর্মী আবদুল মতিন জানালেন, মূলত তারা কাজ শুরু করেন সকাল ১১টার দিক থেকে। ভোরে সেহেরি খাওয়া পর্যন্ত কাজ চলে। প্রসঙ্গত, খলিফাপট্টিতে কাজ করেন নানা বয়সী শ্রমিক।

প্রতিবছর ঈদের ব্যস্ততা ঘিরে স্থায়ী কারিগরদের পাশাপাশি কিছু ‘মৌসুমি কারিগর’ খলিফাপট্টিতে আসেন কাজ করতে।বছরের অন্য সময় দেশের বিভিন্ন এলাকায় তারা কাজ করেন। তবে ঈদের আগে চাহিদা বাড়ে বলে তারা চলে আসেন বন্দরনগরীতে।

ঈদ,আমেজ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত