রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পশ্চিম উজানচরের নবুওছিমদ্দিন পাড়ার গৃহবধূ জাসমা আক্তার (৩৫) এখন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। দুই বছর আগেও প্রতিবেশীদের অনেকে নাক সিটকালেও ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) উৎপাদন এখন তার জন্য আয়ের বড় উৎস।
শুরুটা যেভাবে:
বান্ধবী তানিয়ার সাফল্য দেখে আগ্রহী হয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করেন জাসমা। শুরুতে সমালোচনার মুখে পড়লেও এখন কৃষকরা তার কাছ থেকে সার সংগ্রহ করতে আসছেন। ২০২৩ সালে ফরিদপুর প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী মেলায় ঘুরতে গিয়ে বান্ধবীর স্টলে কেঁচো সার দেখে আগ্রহী হন তিনি। পরে বান্ধবীর কাছ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে তিন কেজি কেঁচো কিনে আনেন। প্রথমে পরিবারের আপত্তির মুখে পড়লেও উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় বিনামূল্যে পাঁচ কেজি কেঁচো সংগ্রহ করে কাজ শুরু করেন।
প্রথমদিকে মাসে ১৫-২০ কেজি সার উৎপাদন করলেও এখন এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০-৫০ মণ। তিনি ১৫-২০ টাকা কেজি দরে সার বিক্রি করছেন। গোয়ালন্দের পশ্চিম উজানচরে নিজের ‘জাসমা ভার্মি কম্পোস্ট ও জৈব সার সেন্টার’ গড়ে তুলেছেন তিনি। সেখানে এখন বৈদ্যুতিক চালিত যন্ত্রের মাধ্যমে সার উৎপাদন হয়।
তার স্বামী মাহবুবুল আজম এখন পুরোপুরি তার কাজে সহযোগিতা করছেন। এছাড়াও চারজন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। খামার থেকে গোবর সংগ্রহে আরও কিছু লোক যুক্ত হয়েছেন। এভাবেই প্রতি মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় করছেন জাসমা।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ঘেঁষে গোয়ালন্দের পশ্চিম উজানচর নবুওছিমদ্দিন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই ‘জাসমা ভার্মি কম্পোস্ট ও জৈব সার সেন্টার’। দুটি টিনশেড ঘরে বৈদ্যুতিক চালিত যন্ত্র বসানো। শ্রমিকরা সেখানে সার উৎপাদনে ব্যস্ত।
উজানচর নতুন পাড়ার কৃষক হারুন অর রশিদ জানান, রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করে তার ফসল ভালো ফলন দিচ্ছে। প্রতি বিঘায় এক থেকে দেড় মণ জৈব সার ব্যবহার করছেন।
এ কাজে দুইজন পুরুষ ও দুইজন নারী শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। স্থানীয় কিছু মানুষ গোবর সংগ্রহ করে আনেন, যা বিক্রয় করে তারা উপার্জন করছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জাসমা বলেন, "আমি শুধু এখানেই থেমে থাকতে চাই না। ভবিষ্যতে বায়োগ্যাস প্রকল্প শুরু করতে চাই। আমার সারের সুনাম যাতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে, সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।"
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান বলেন, "একদিন জাসমা আমার কার্যালয়ে এসে আগ্রহ প্রকাশ করে। তখন আমাদের ‘অনাবাদি পতিত জমির আওতায় প্রদর্শনী প্রকল্প’ চলছিল। আমরা তার উদ্যোগকে সহায়তা করি। এখন এখান থেকে কৃষি বিভাগের বড় একটি অংশের জৈব সার চাহিদা পূরণ হচ্ছে।"