বহু প্রতীক্ষার পর দেশের বৃহত্তম যমুনা রেলসেতু আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হলো। এর মাধ্যমে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের রেল যোগাযোগে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে সেতুর পূর্ব ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে রেলসেতুর উদ্বোধন করেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এম ফাহিমুল ইসলাম। রেলওয়ের মহাপরিচালক এম আফজাল হোসেনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি ও জাইকার দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মহাপরিচালক ইতো তেরুয়ুকি।
উদ্বোধনের পর তারা একটি বিশেষ ট্রেনে করে সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিম প্রান্তে সিরাজগঞ্জের সায়দাবাদ স্টেশনে যান এবং সেখানে সংবাদ সম্মেলন করেন।
উদ্বোধনী বিশেষ ট্রেনটি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে ১২টা ১৫ মিনিটে যাত্রা শুরু করে এবং মাত্র ৩ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে সেতু অতিক্রম করে।
এটি রেলপথে গতি ও সময় সাশ্রয়ের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এ সেতু উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে রেলপথের সম্ভাবনাময় নতুন দ্বার উন্মোচন হলো। তবে উত্তরের মানুষের পথের কাঁটা হয়ে থাকলো ১১৪ কিলোমিটার সিঙ্গেল রেললাইন।
এছাড়া ১৯ মার্চ থেকে সেতুটি ব্যবহারকারী প্রতিটি ট্রেনের যাত্রীকে গুনতে হবে বাড়তি ভাড়া। গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী থেকে সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস ট্রেন প্রথমবারের মতো যাত্রী নিয়ে যমুনা রেলসেতু পার হয়ে ঢাকায় পৌঁছায়। পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানোর সময় একটি ট্রেন ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে সেতুটি অতিক্রম করে। এবার যমুনা রেলসেতু উদ্বোধন হলো আনুষ্ঠানিকভাবে।
এ উদ্বোধনের মধ্যে দিয়েই রাজধানী ঢাকার সাথে উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের রেল যোগাযোগের মাধ্যমে আরো উন্নয়ন ঘটবে। রেল কর্মকর্তারা বলছেন, রাজশাহী থেকে যমুনা রেলসেতু পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ১৩৪ কিলোমিটার। এরমধ্যে নাটোরের আব্দুলপুর জংশন থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রেলপথ ডাবল লাইন। আর ঈশ্বরদী থেকে রেলসেতু পর্যন্ত ৭১ কিলোমিটার এবং রাজশাহী থেকে আব্দুলপুর পর্যন্ত ৪৩ কিলোমিটার মিলে ১১৪ কিলোমিটার রেলপথ সিঙ্গেল লাইন। এ ১১৪ কিলোমিটারে ট্রেন পাসিংয়ের জন্য দাঁড়াবে। ফলে যাত্রীদের দূুর্ভোগ ঠিকই হবে।
যদিও জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত রেললাইনকে ডাবল লাইনে উন্নীত করতে রেলওয়ের একটি প্রকল্প থাকলেও কাজ চলছে না। যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, রেল সেতুতে দুটি লাইন রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে একটি লাইনে প্রতিদিন ৩৪টি ট্রেন চলাচল করছে। আজ থেকে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে দিনে কমপক্ষে ৮৮টি ট্রেন দ্রুত গতিতে সেতু পার হতে পারবে এবং এ পারাপারে অবশ্যই সময় সাশ্রয় হবে।
এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা। যার ৭২ দশমিক ৪ শতাংশ ঋণ হিসেবে দিয়েছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) এবং বাকি অর্থ সরকার দিয়েছে। জাপানের ওটিজি এবং আইএইচআই যৌথভাবে সেতুটি নির্মাণ করেছে।
এর আগে ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এ রেল সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তী ২০২১ সালের মার্চে পিলার নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ শুরু করা হয়। এ রেল সেতু দেশের দীর্ঘতম প্রথম ডাবল ট্রাকের ডুয়েল গেজের সেতু এবং এ সেতুর দৈর্ঘ্যে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার ।
এদিকে এ রেলসতুর উদ্বোধন ঘিরে যমুনার এপার ওপার হাজার হাজার নারী পুরুষের ভীড় জমেছিল এবং উভয়পাড়ের অন্যরকম আনন্দে মেতে ওঠে।