কক্সবাজার শহরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যক্তি দাবি করে কৃষকদলের এক নেতা ‘ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে একটি ফ্লোর’ তার নামে লেখা দেয়ার আবদার করেছেন। তা না হলে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে পুরো জায়গাটি দখল করে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি।
কৃষকদলের ওই নেতা বলেছেন, “ ভবন নির্মাণ করে একটি ফ্লোর আমার নামে দেন, না হয় শিক্ষার্থীরা পুরো জায়গা দখল করে নেবে। “
বুধবার বিকালে কক্সবাজার শহরের ঝাউতলা এলাকায় নিজ বাড়িতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে ওমর ফারুক হুদা এ অভিযোগ করেন।
এসময় তিনি কৃষকদল নেতা গিয়াস উদ্দিন আফসেলের সঙ্গে কথোপকথনের দুটি ফোন রেকর্ডও সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভুক্তভোগী মৃত সামশুল হুদার ছেলে ওমর ফারুক হুদা। এসময় ওমর ফারুক হুদার মা আনোয়ারা বেগম উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে ওমর ফারুক হুদা বলেন, কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কস্থ বিমানবন্দর সড়ক মোড়ে সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়; স্কুলের দক্ষিণ পাশে সৈকত মার্কেট এবং মার্কেটের পশ্চিমের অংশ মিলে মোট ৩ টি বিএস দাগের জায়গা রয়েছে। ওই ৩টি বিএস দাগের একটি বিএস খতিয়ান (নং- ২৭২) আমাদের পরিবারের এবং অপর বিএস খতিয়ান (নং- ১৪) বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নামে চূড়ান্ত প্রচারিত রয়েছে। এই দাগ সমূহে অন্য কোনো খতিয়ান নাই।
তিনি বলেন, আমাদের পরিবারের এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের খতিয়ানভুক্ত জমির উপর অবৈধভাবে জমির কিছু অংশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং সৈকত সুপার মার্কেট নামক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে। যা থেকে প্রতিবছর বিশাল অঙ্কের টাকা আয় করে আসছে। মার্কেটটির পশ্চিমাংশে ডিসেন্ট প্লাস নামের দর্জি দোকান সংলগ্ন ২শতক জমি দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবত ভাড়া দিয়ে শান্তিপূর্ণ ভোগ দখলে আছি।
“ এর মধ্যে আমাকে এবং বেবিচক দুই পক্ষকে বিবাদি করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০০৩ সালে কক্সবাজার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছিল; যা আদালত পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে বিজ্ঞ কুতুবদিয়া সহকারী জজ আদালতে বিচারাধীন আছে। মামলাটিতে আমি এবং বেবিচক অদ্যাবধি আইনি লড়াই করে আসছি এবং আদালতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।”
ভুক্তভোগী ওমর ফারুক অভিযোগ করে বলেন, “ এর মধ্যে ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর বিজ্ঞ আদালতে বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক সমর চন্দ্র দেবনাথ স্বাক্ষরিত একটি লিখিত সত্য পাঠ পূর্বক- বাদী অথবা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিএস ২৭২ নং খতিয়ান এর কোন জমি দাবি করেন না তাই অত্র মামলার আর্জি থেকে বিএস ২৭২ নং খতিয়ান এর শরিকদার বিবাদিগন কে বাদ দেয়ার জন্য করে আমাদেরকে বিবাদি পক্ষ থেকে বাদ দেয়ার কথা আদালতে আবেদনও করেন। “
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সৈকত মার্কেটে পশ্চিমের অংশের দোকান গৃহটি ভোগ দখলে থাকলেও নানা কারণে স্থায়ী ভাবে কোন উন্নয়নমূলক কাজ করতে গেলেই প্রতিবার বাধা প্রদান এবং বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করেছেন দাবি করেন এ ভুক্তভোগী।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতাদের স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি করে আমাদের নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। সর্বশেষ এই পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা। আমরা তার অনবরত হুমকি ও চাপের কারণে দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ীভাবে কোন কিছু করতে পারিনি। ২০২৪ এর ৫ই আগস্ট সরকার এর পট পরিবর্তন হলে আমি এবং আমার পরিবার আশা করেছিলাম, এবার হয়ত আমাদের মালিকানাধীন জমিতে কাজ করতে আর ঝামেলা হবে না।
“ কিন্তু মাসখানেক আগে ওই জমিতে কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করলে কক্সবাজার জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক পরিচয়ে জনৈক গিয়াস উদ্দিন আফসেল নামের এক ব্যক্তি আমাকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিতে শুরু করেন। পরে তার সঙ্গে সরাসরি দেখা-সাক্ষাৎ হলে নিজেকে স্কুল কমিটির দায়িত্বশীল দাবি করেন তিনি। পরে আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়ে তিনি ওই জমিতে কোনোরূপ কাজ না করার জন্য ফোনে বারণ করেন। “
লিখিত বক্তব্যে ওমর ফারুক হুদা বলেন, আমাদের মালিকানাধীন জমি নিয়ে কৃষকদল নেতা গিয়াস উদ্দিন আফসেল আপোষ-মিমাংসার প্রস্তাব দেন। তিনি শর্ত দিয়ে প্রস্তাব করেন- আমাদের মালিকানাধীন জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ করলে একটি তলা তার নামে লিখে দিতে হবে।
প্রস্তাবিত দাবি না মানলে স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আমার খতিয়ানীতিতে স্বত্ব দখলীয় জমির অংশটি দখল করে নেওয়া হবে বলে কৃষকদলের ওই নেতা হুমকি দেওয়ার তথ্য দিয়ে ভুক্তভোগী এ ব্যক্তি বলেন, “ গিয়াস উদ্দিন আফসেলের প্রস্তাব না মানলে নানাভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তারসহ পুলিশের মাধ্যমে হয়রানি করা হবে। “
সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয় কোমল মতি শিক্ষার্থীরা কথিত রাজনৈতিক নেতা জনৈক গিয়াস উদ্দিন আফসেল বিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে তাদের ব্যক্তিগত লোভ এবং স্বার্থ চরিতার্থ করার মত অনৈতিক কাজে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে যেন সদয় দৃষ্টি রাখেন।
এ নিয়ে কক্সবাজার জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দিন আফসেল এর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেছেন, “ বিরোধীয় জায়গাটি নিয়ে তার ব্যক্তিগত কোন স্বার্থ নেই। স্কুল পরিচালনা কমিটির অভিভাবক সদস্য হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র। বিরোধীয় প্রতিপক্ষকে কোন ধরনের হুমকি প্রদান এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ আদায়ের প্রস্তাব দেননি। “
মূলত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও মহল বিশেষের ইন্ধনে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করা হচ্ছে দাবি তিনি জানান, জায়গাটি নিয়ে আদালতে দায়ের মামলা বিচারাধীন। মামলায় বাদী ও বিবাদী যে পক্ষেই রায় যাক না তাতে তার কোন আপত্তি নেই। তবে স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবে যতদিন দায়িত্বে আছেন, ততদিন স্কুলের স্বার্থই দেখবেন।
বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক সমর চন্দ্র দেবনাথের ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোন ধরেননি। উত্তর মিলেনি পাঠানো ক্ষুদে বার্তারও।