কক্সবাজারের টেকনাফের মিয়ানমার থেকে নতুন করে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ট্রলার ডুবির ঘটনায় ৪ জনের মরদেহ নাফনদীতে ভাসছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন।
তিনি বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ ও দমদমিয়াস্থ নাফনদীর মোহনায় পানিতে এই ৪ জনের মরদেহ ভাসছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। এদের মধ্যে এক শিশু ও ৩ নারীর মরদেহ রয়েছে। এদের স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে।
এর আগে শুক্রবার মধ্যরাতে শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিমে রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। এতে এ পর্যন্ত ২৫ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করেছে বিজিবি। এ ঘটনায় বিজিবির এক সদস্য সহ অনেকেই নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির টেকনাফস্থ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান।
তিনি জানিয়েছেন, শুক্রবার মধ্যরাতে টেকনাফের শাহাপরীরদ্বীপ পশ্চিমপাড়া ঘাটের নিকটে রোহিঙ্গা বোঝাই একটি ট্রলার অবৈধ উপায়ে সাগর পথে বাংলাদেশের অনুপ্রবেশের সময় তলা ফেটে যায়। এতে ট্রলারটি ডুবির খবর পেয়ে সৈকতের পার্শবর্তী স্থানে কর্তব্যরত বিজিবি সদস্যরা তৎক্ষণাৎ স্থানীয় জেলেদের নিয়ে তাদের উদ্ধারের জন্য এগিয়ে গেলে ২৫ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এই উদ্ধারকার্য চলাকালে একজন বিজিবি সদস্য সমুদ্রে নিখোঁজ হয়। পরবর্তীতে ডুবে যাওয়া ট্রলার উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
নিখোঁজ বিজিবির সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ বেলাল (২৮)। বিজিবির সদস্য টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত ফাঁড়ি (চৌকির) অধীনে কর্মরত সিপাহী হিসিবে ছিলেন। তার সঙ্গে থাকা একটি রাইফেলস ও চারটি ম্যাগাজিনও নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিজিবির ওই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবহনকারী একটি ট্রলার ডুবির ঘটনা শুনেছি। এ ঘটনায় বিজিবির এক সদস্যসহ বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নিখোঁজ থাকার খবর পেয়েছি।
স্থানীয়রা জানান, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবোঝাই একটি ট্রলার টেকনাফে শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিম পাড়া এলাকায় সাগরে ভাসমান দেখেন বিজিবির এক সদস্য। ওই নৌকাতে ওঠেন বিজিবির নিখোঁজ সদস্য। স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিনের মালিকাধীন মাছ ধরার নৌকায় শাকের মাঝির নেতৃত্বে মাঝিমাল্লারা রোহিঙ্গাবহনকারী নৌকাটি থামানো সংকেত দেয়।
এ সময় উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। তাদের চিৎকারে নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে স্থানীয় জেলে ও বিজিবি। পরে নিখোঁজ বিজিবির সদস্যসহ রোহিঙ্গাদের সন্ধানে সাগরে তল্লাশি চালানো হয়।
ট্রলার মালিক মো. আমিন বলেন, মাঝরাতে সাগরে রোহিঙ্গাবহনকারী ট্রলার ধরতে যাওয়ার কথা বলে ওই বিজিবির সদস্য আমার নৌকাটি নিয়ে যান। পরে রোহিঙ্গাবহনকারী নৌকাটি কূলে নিয়ে আসার পথে সাগরে ঢেউয়ের স্রোতে ডুবে যায়। এতে ২৫ জনের মতো রোহিঙ্গা জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিজিবির এক সিপাহি নিখোঁজ রয়েছেন। তাকে উদ্ধারে সাগরে তল্লাশি চলছে।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিম পাড়া নৌঘাটের পাহারাদার আবদুল মান্নান জানান, মধ্যরাতে রোহিঙ্গাবাহী নৌকা কূল ঘেঁষে যাওয়ার সময় টহলরত বিজিবির সদস্যরা দেখতে পান। তখন ঘাট থেকে একটি নৌকা নিয়ে তাদের আটকে দেয়। তারপর কীভাবে রোহিঙ্গাবাহী ট্রলার ডুবে যায় সেটা জানি না। তবে এ ঘটনায় ২৫ রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিজিবির এক সদস্যসহ ৩৫ জনের মতো রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের খুঁজতে ঘাটের একাধিক নৌকায় সাগরে তল্লাশি চালাচ্ছেন জেলেরা।
নৌকাডুবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিম পাড়া জেলে ঘাটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর বলেন, গভীর রাতে শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিম পাড়া বরাবর রোহিঙ্গাবহনকারী একটি নৌকা অনুপ্রবেশের সময় ডুবে যাওয়ার ঘটনা শুনেছি। এ ঘটনায় অন্য নৌকায় উদ্ধার করতে যাওয়া বিজিবির এক সদস্যও নিখোঁজ থাকার খবর জেলেরা অবহিত করেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জেনেছি।